রোমীয়
গ্রন্থস্বত্ব
রোমীয় 1:1 ইঙ্গিত দেয় যে রোমীয়দের প্রতি পত্রের রচয়িতা পৌল ছিলেন, 16 বছর বয়ষ্ক নীরোর রোমীয় সম্রাট রূপে সিংহাসনে আরোহণের ঠিক তিন বতসর পরে তিনি করিন্থের গ্রীক শহর থেকে রোমীয়দের লিখেছিলেন। বিশিষ্ট গ্রীক শহর আবারও যৌন অনৈতিকতা এবং মূর্ত্তি পূজার উষ্ণ শয্যা ছিল। সুতরাং পৌল যখন রোমীয়দেরকে মনুষ্যদের পাপ পূর্ণতা অথবা ঈশ্বরের অনুগ্রহের ক্ষমতার কথা লিখলেন যা অলৌকিকভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে জীবনকে পরিবর্তন করে, তখন তিনি জানতেন কার সম্বন্ধে তিনি বলছেন। পৌলের বিষয় খ্রিষ্টীয় সুসমাচারের মৌলিক বিষয়কে রেখাঙ্কিত করে, সমস্ত মুখ্য বিন্দু সমূহকে আঘাত করে: ঈশ্বরের পবিত্রতা, মানবজাতির পাপ, এবং যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা প্রদত্ত রক্ষাকারী অনুগ্রহ
রচনার সময় এবং স্থান
করিন্থ থেকে আনুমাণিক 57 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
রচনার মুখ্য স্থান রোম হতে পারে।
গ্রাহক
সমস্ত রোমীয়দেরকে যারা ঈশ্বরের দ্বারা প্রীত হয় এবং তাঁর পবিত্র লোক হতে আহ্বান করা হয়, অর্থাৎ রোম শহরের মধ্যে মণ্ডলীর সদস্যগণ (রোমীয় 1:7), রোম রোমীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী হচ্ছে।
উদ্দেশ্য
রোমীয়দের প্রতি পত্রটি একেবারে সুস্পষ্টভাবে এবং প্রনালীবদ্ধ উপস্থাপনে খ্রিষ্টিয় ধর্মের মতবাদকে স্থাপিত করে। পৌল সমস্ত মানবজাতির পাপ পূর্ণতার আলোচনা দিয়ে শুরু করেছিলেন। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আমাদের বিদ্রোহের জন্য সমস্ত লোকেরা দণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়েছে। যাইহোক, ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহে আমাদেরকে তাঁর পুত্র যীশুর মধ্যে বিশ্বাসের দ্বারা ন্যায় প্রদান করেন। যখন আমরা ঈশ্বরের দ্বারা ন্যায় পাই, আমরা উদ্ধার অথবা পরিত্রান পাই, কারণ খ্রীষ্টের রক্ত আমাদের পাপ আচ্ছাদন করে। এই বিষয়ের ওপরে পৌলের আলোচনা একটি যুক্তিযুক্ত এবং সম্পূর্ণ উপস্থাপনকে প্রদান করে যে কিভাবে একজন ব্যক্তি শাস্তি এবং তার পাপের থেকে রক্ষা পেতে পারে।
বিষয়
ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা
রূপরেখা
1. পাপ দন্ডের অবস্থা এবং ধার্মিকতার প্রয়োজন — 1:18-3:20
2. ধার্ম্মিকতা আরোপিত, ন্যায্যতা — 3:21-5:21
3. ধার্ম্মিকতা জ্ঞাপন করা হয়, শুদ্ধিকরণ — 6:1-8:39
4. ইসরায়েলের জন্য স্বর্গীয় যোগান — 9:1-11:36
5. ধার্মিক অভ্যাসের পালন — 12:1-15:13
6. উপসংহার: ব্যক্তিগত বার্তা — 15:14-16:27
1
পৌল, একজন যীশু খ্রীষ্টের দাস, প্রেরিত হবার জন্য ডাকা হয়েছে এবং ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচারের জন্য আলাদা ভাবে মনোনীত করেছেন, যে সুসমাচার ঈশ্বর পবিত্র শাস্ত্রে নিজের ভবিষ্যৎ বক্তাদের মাধ্যমে আগে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন; এই সুসমাচার গুলি তার পুত্রের সম্পর্কে ছিল, দেহের দিক থেকে যিনি দায়ূদের বংশে জন্ম নিয়েছেন। পবিত্র আত্মার শক্তিতে এবং পুনরুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি হলেন যীশু খ্রীষ্ট আমাদের প্রভু। তাঁর মাধ্যমেই যাঁর নামের জন্য ও সব জাতির মধ্যে বিশ্বাসের ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলার জন্য আমরা অনুগ্রহ এবং প্রেরিতত্ত্ব পেয়েছি। সেই মানুষের মধ্যে তোমরাও আছ এবং যীশু খ্রীষ্টের লোক হবার জন্য তোমাদের ডেকেছেন। রোমে ঈশ্বরের প্রিয় মনোনীত পবিত্র যত লোক আছেন সেই সব পবিত্র মানুষের কাছে এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বরও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট থেকে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের উপর আসুক।
রোমে পরিদর্শনের জন্য পৌলের আকাঙ্খা।
প্রথমতঃ আমি তোমাদের সবার জন্য যীশু খ্রীষ্টর মাধ্যমে আমার ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ করছি যে, তোমাদের বিশ্বাস সমগ্র পৃথিবীতে প্রচারিত হয়েছে। কারণ আমি যাঁর আরাধনা নিজের আত্মায় তাঁর পুত্রের সুসমাচার করে থাকি সেই ঈশ্বর আমার সাক্ষী যে, আমি সবদিন তোমাদের নাম উল্লেখ করে থাকি, 10 আমার প্রার্থনার দিন আমি সবদিন অনুরোধ করি যেন, যে কোনো ভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছায় তোমাদের কাছে যাবার জন্য সফল হতে পারি। 11 কারণ আমি তোমাদের দেখার জন্য ইচ্ছা করছি, যেন আমি তোমাদের এমন কোন আত্মিক অনুগ্রহ দিতে পারি যাতে তোমরা মজবুত হতে পার; 12 সেটা হলো আমরা যেন একে অন্যের অর্থাৎ তোমাদের ও আমার উভয় পক্ষের আন্তরিক বিশ্বাসের মাধ্যমে সবাই যেন নিজে নিজেই উত্সাহ পাই।
মিশর থেকে পৌলের চলে যাবার সিদ্ধান্ত।
13 এখন হে ভাইয়েরা, আমি চাইনা যে তোমরা যেন এবিষয়ে অজানা থাক, আমি বারবার তোমাদের কাছে আসবার জন্য ইচ্ছা করেছি এবং আজ পর্যন্ত বাধা পেয়ে এসেছি যেন আমি তোমাদের মধ্য থেকে কোনো ফল পাই তেমন ভাবে অযিহুদি অন্য সব মানুষের মধ্য থেকেও ফল পাই। 14 আমি গ্রীক ও বর্ব্বর, উভয় জ্ঞানী ও বোকা সবার কাছে ঋণী। 15 সুতরাং আমার যতটা ক্ষমতা আছে তোমরা যারা রোমে বাস করো সবার কাছে সুসমাচার প্রচার করতে তৈরী আছি। 16 কারণ আমি সুসমাচারের জন্য কোনো লজ্জা পাই না; কারণ এটা হলো প্রত্যেক বিশ্বাসীর পরিত্রানের জন্য ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমে ইহূদির জন্য এবং পরে গ্রীকদের জন্য। 17 কারণ এর মধ্যে ঈশ্বরের এক ধার্ম্মিকতা বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই সুসমাচারে প্রকাশিত হয়েছে, যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে, “ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস দ্বারাই বেঁচে থাকবে”।
যীশু খ্রীষ্ট দ্বারাই ধার্ম্মিকতা লাভ হয়।
18 কারণ ঈশ্বরের ক্রোধ যে সব মানুষের ভক্তি নেই তাদের উপর এবং অধার্মিকদের উপরে স্বর্গ থেকে প্রকাশ পায় এবং তাদের উপর যারা অধার্মিকতায় ঈশ্বরের সত্যকে চেপে রাখে। 19 কারণ ঈশ্বরের সম্পর্কে যা জানার তা তাদের কাছে প্রকাশ হয়েছে, কারণ ঈশ্বর নিজেই তা তাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। 20 সাধারণত তাঁর অদৃশ্য গুন অর্থাৎ তাঁর চিরকালের শক্তি ও ঈশ্বরীয় স্বভাব পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে তাঁর নানা কার্য্য তাঁর সৃষ্টি থেকেই মানুষ বুঝতে পেরেছে। সেইজন্য তাদের কাছে উত্তর দেবার জন্য কোনো অজুহাত নেই। 21 কারণ ঈশ্বরকে জেনেও তারা তাঁকে ঈশ্বর বলে তাঁর গৌরব করে নি, ধন্যবাদও দেয় নি; কিন্তু নিজেদের চিন্তাধারায় তারা নির্বোধ হয়ে পড়েছে এবং তাদের বুদ্ধিহীন হৃদয় অন্ধকার হয়ে গেছে। 22 নিজেদেরকে জ্ঞানী বলে দাবী করে তারা মূর্খই হয়েছে। 23 তারা অক্ষয় ও চিরস্থায়ী ঈশ্বরের মহিমা পরিবর্তন করে স্থায়ী নয় এমন মানুষের, পাখীর, চার পা বিশিষ্ট পশুর ও সরীসৃপের মূর্তির উপাসনা করছে। 24 সেই কারণে ঈশ্বর তাদেরকে নিজের নিজের হৃদয়ের নানা কামনা বাসনায় তাদের হৃদয় অশুচিতে সম্পূর্ণ করতে ছেড়ে দিলেন, সে কারণে তাদের দেহ নিজেরাই অসম্মান করেছে; 25 তারা মিথ্যার জন্য ঈশ্বরের সত্য পরিবর্তন করেছে এবং সৃষ্টিকর্ত্তার উপাসনার পরিবর্তে সৃষ্টি করা বস্তুর পূজা ও আরাধনা করছে, সেই ঈশ্বরের নয় যিনি যুগে যুগে ধন্য। আমেন। 26 এই কারণে ঈশ্বর তাদেরকে জঘন্য ও অসম্মান কাজের জন্য ছেড়ে দিয়েছে; আর তাদের স্ত্রীলোকেরা স্বাভাবিক কাজের পরিবর্ত্তে অস্বাভাবিক কাজ করে চলেছে। 27 আর পুরুষেরাও সেই রকম স্বাভাবিক স্ত্রীসঙ্গ ছেড়ে পরস্পর কামনায় জ্বলে উঠেছে, পুরুষ পুরুষে খারাপ কাজ সম্পন্ন করছে যেটা একদম ঠিক নয় এবং নিজেদের মধ্যেই নিজে নিজের খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পাচ্ছে। 28 আর যেমন তারা ঈশ্বরকে নিজেদের সতর্কতা বলে মানতে চাই নি বলে, ঈশ্বর তাদেরকে অনুচিত কাজ করতে দুষিত মনে ছেড়ে দিলেন। 29 তারা সব রকম অধার্মিকতা, নিচুতা, বিদ্বেষ, দুষ্টতায় পরিপূর্ণ। তারা লোভ ও হিংসাতে, মাৎসহ্য, বধ, বিবাদ, ছল ও খারাপ উদ্দেশ্যে পূর্ণ; 30 তারা সমালোচনায়, মিথ্যাবাদী ও ঈশ্বরকে ঘৃণা করে, রাগী, উদ্ধত, আত্মশ্লাঘী, মন্দ বিষয়ের উৎপাদক, পিতামাতার অবাধ্য, নির্বোধ, 31 তাদের কোনো বিচার বুদ্ধি নেই, তারা বিশ্বাস যোগ্য নয়, স্বাভাবিক ভালবাসা তাদের নেই এবং দয়াহীন। 32 তাদের ঈশ্বরের এই বিচারের কথা জানা ছিল যে, যারা এইগুলি করবে তারা মৃত্যুর যোগ্য, কিন্তু তারা যে শুধু করে তা নয় কিন্তু সেইরূপ যারা করে তাদেরকেও সায় দেয়।