10
স্ত্রী পরিত্যাগ বিষয়ে শিক্ষা।
যীশু সেই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়াতে ও যর্দ্দন নদীর অন্য পারে এলেন; এবং তাঁর কাছে আবার লোক আসতে লাগলো এবং তিনি নিজের নিয়ম অনুসারে আবার তাদেরকে শিক্ষা দিতে লাগলেন।
তখন ফরীশীরা পরীক্ষা করার জন্য তাঁর কাছে এসে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলো একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া কি উচিত?
তিনি তাদের উত্তর দিলেন, মোশি তোমাদেরকে কি আদেশ দিয়েছেন?
তারা বলল, ত্যাগপত্র লিখে নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দেবার অনুমতি মোশি দিয়েছেন।
যীশু তাদেরকে বললেন, তোমাদের মন কঠিন বলেই মোশি এই আদেশ লিখেছেন;
কিন্তু সৃষ্টির প্রথম থেকে ঈশ্বর পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদের বানিয়েছেন;
এই জন্য মানুষ তার বাবা ও মাকে ত্যাগ করে নিজের স্ত্রীতে আসক্ত হবে।
“আর তারা দুইজন এক দেহ হবে, সুতরাং তারা আর দুই নয়, কিন্তু এক দেহ।”
অতএব ঈশ্বর যাদেরকে এক করেছেন মানুষ যেন তাদের আলাদা না করে।
10 শিষ্যেরা ঘরে এসে আবার সেই বিষয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন।
11 তিনি তাদেরকে বললেন, যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য স্ত্রীকে বিয়ে করে, সে তার সঙ্গে ব্যভিচার করে;
12 আর স্ত্রী যদি নিজের স্বামীকে ছেড়ে অন্য আর একজন পুরুষকে বিয়ে করে, তবে সেও ব্যভিচার করে।
শিশুদের বিষয়ে শিক্ষা।
13 পরে লোকেরা কতগুলো শিশুকে যীশুর কাছে আনলো, যেন তিনি তাদেরকে ছুতে পারেন কিন্তু শিষ্যরা তাদের ধমক দিলেন।
14 যখন যীশু তা দেখে রেগে গেলেন, আর শিষ্যদের কে বললেন, শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও, বারণ করো না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এই রকম লোকদেরই।
15 আমি তোমাদের সত্য বলছি, যে কেউ শিশুর মতো হয়ে ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, তবে সে কখনই ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
16 পরে যীশু শিশুদের কোলে তুলে নিলেন ও তাদের মাথার উপরে হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন।
ধর্ম্মাচরণ বিষয়ে শিক্ষা।
17 পরে যখন তিনি আবার বের হয়ে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, একজন লোক দৌড়ে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বিনীত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন হে সৎগুরু, অনন্ত জীবন পেতে হোলে আমাকে কি কি করতে হবে?
18 যীশু তাকে বললেন, আমাকে সৎ কেন বলছো? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সৎ নয়।
19 তুমি আদেশগুলি জান, “মানুষ খুন করো না, ব্যভিচার করো না, চুরি করো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না, ঠকিও না, তোমার বাবা মাকে সম্মান করো”।
20 সেই লোকটি তাঁকে বলল, হে গুরু, ছোট্ট বয়স থেকে এই সব নিয়ম আমি মেনে আসছি।
21 যীশু তার দিকে ভালবেসে তাকালেন এবং বললেন, একটি বিষয়ে তোমার অভাব আছে, যাও, তোমার যা কিছু আছে, বিক্রি করে গরিবদের দান কর, তাতে স্বর্গে তুমি ধন পাবে; আর এস, আমাকে অনুসরণ কর।
22 এই কথায় সেই লোকটি হতাশ হয়ে চলে গেল, কারণ তার অনেক সম্পত্তি ছিল।
23 তারপর যীশু চারিদিকে তাকিয়ে নিজের শিষ্যদের বললেন, যারা ধনী তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা অনেক কঠিন!
24 তাঁর কথা শুনে শিষ্যরা অবাক হয়ে গেলো; কিন্তু যীশু আবার তাদের বললেন, সন্তানেরা যারা ধন সম্পত্তিতে নির্ভর করে, তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা অনেক কঠিন!
25 ঈশ্বরের রাজ্যে ধনী মানুষের ঢোকার থেকে সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সোজা।
26 তখন তারা খুব অবাক হয়ে বললেন, “তবে কে রক্ষা পেতে পারে?”
27 যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন এটা মানুষের কাছে অসম্ভব, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব নয়, কারণ ঈশ্বরের কাছে সবই সম্ভব।
28 তখন পিতর তাঁকে বললেন, দেখুন, আমরা সব কিছু ছেড়ে আপনার অনুসরণকারী হয়েছি।
29 যীশু বললেন, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এমন কেউ নেই, যে আমার জন্য ও আমার সুসমাচার প্রচারের জন্য তার ঘরবাড়ি, ভাই বোনদের, মা বাবাকে, ছেলে-মেয়েকে, জমিজায়গা ছেড়েছে কিন্তু এই পৃথিবীতে থাকাকালীন সে তার শতগুণ কি ফিরে পাবে না;
30 সে তার ঘরবাড়ি, ভাই, বোন, মা, ছেলেমেয়ে ও জমিজমা, সবই ফিরে পাবে এবং আগামী দিনের অনন্ত জীবন পাবে।
31 কিন্তু অনেকে এমন লোক যারা প্রথম, তারা শেষে পড়বে এবং যারা শেষের, তারা প্রথম হবে। যীশু তৃতীয় বার নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন।
যীশু পুনরায় নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বলেন।
32 একদিনের তারা, যিরূশালেমের পথে যাচ্ছিলেন এবং যীশু তাদের আগে আগে যাচ্ছিলেন, তখন শিষ্যরা অবাক হয়ে গেল; আর যারা পিছনে আসছিল, তারা ভয় পেলো। পরে তিনি আবার সেই বারো জনকে নিয়ে নিজের ওপর যা যা ঘটনা ঘটবে, তা তাদের বোলতে লাগলেন।
33 তিনি বললেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাচ্ছি, আর মনুষ্যপুত্র প্রধান যাজকদের ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের হাতে সমর্পিত হবেন, তারা তাঁকে মৃত্যুদন্ডের জন্য দোষী করবে এবং অইহূদির হাতে তাঁকে তুলে দেবে। 34 আর তারা তাঁকে ঠাট্টা করবে, তাঁর মুখে থুথু দেবে, তাঁকে চাবুক মারবে ও মেরে ফেলবে; আর তিনদিন পরে তিনি আবার বেঁচে উঠবেন।
ঈশ্বরের রাজ্যে মহান কে, এ বিষয়ে আরও শিক্ষা।
35 পরে সিবদিয়ের দুই ছেলে যাকোব ও যোহন, তাঁর কাছে এসে বললেন, হে গুরু আমাদের ইচ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যা চাইবো, আপনি তা আমাদের জন্য করবেন।
36 তিনি বললেন, তোমাদের ইচ্ছা কি? তোমাদের জন্য আমি কি করব?
37 তারা উত্তরে বলল, আমাদেরকে এই আশীর্বাদ করুন, আপনি যখন রাজা ও মহিমান্বিত হবেন তখন আমদের একজন আপনার ডান দিকে, আর একজন আপনার বাম দিকে বসতে পারি।
38 যীশু তাদের বললেন, তোমরা কি চাইছ তোমরা তা জানো না। আমি যে পেয়ালায় পান করি, তাতে কি তোমরা পান করতে পার এবং আমি যে বাপ্তিষ্মের বাপ্তিষ্ম নেই, তাতে কি তোমরা বাপ্তিষ্ম নিতে পার?
39 তারা বলল পারি। যীশু তাদেরকে বললেন, আমি যে পেয়ালায় পান করি, তাতে তোমরা পান করবে এবং আমি যে বাপ্তিষ্মের বাপ্তিষ্ম নেই, তাতে তোমরাও বাপ্তিষ্ম নেবে;
40 কিন্তু যাদের জন্য জায়গা তৈরী করা হয়েছে, তাদের ছাড়া আর কাউকেও আমার ডান পাশে কি বাম পাশে বসতে দেওয়ার আমার অধিকার নেই।
41 এই কথা শুনে অন্য দশ জন যাকোব ও যোহনের উপর রেগে যেতে লাগলো।
42 কিন্তু যীশু তাদেরকে কাছে ডেকে বললেন, তোমরা জান, অইহূদিদের ভিতরে যারা শাসনকর্ত্তা বলে পরিচিত, তারা তাদের মনিব হয় এবং তাদের ভেতরে যারা মহান, তারা তাদের উপরে কর্তৃত্ব করে।
43 তোমাদের মধ্যে সেরকম নয়; কিন্তু তোমাদের মধ্য যে কেউ মহান হতে চায়, সে তোমাদের সেবক হবে।
44 এবং তোমাদের মধ্য যে কেউ প্রধান হতে চায়, সে সকলের দাস হবে।
45 কারণ মনুষ্যপুত্র জগতে সেবা পেতে আসেনি, কিন্তু অপরের সেবা করতে এসেছে এবং মানুষের জন্য নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসাবে দিতে এসেছেন।
যীশু যিরূশালেমে গমন করেন ও শিক্ষা দেন। অন্ধ বরতীময়কে দেখার ক্ষমতা দেন।
46 পরে তাঁরা যিরীহোতে এলেন। আর যীশু যখন নিজের শিষ্যদের ও অনেক লোকের সঙ্গে যিরীহো থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তীময়ের ছেলে বরতীময় নামে একজন অন্ধ ভিখারী পথের পাশে বসেছিল।
47 সে যখন নাসরতীয় যীশুর কথা শুনতে পেলো, তখন চেঁচিয়ে বলতে লাগলো হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন।
48 তখন অনেক লোক চুপ করো চুপ করো বলে তাকে ধমক দিল; কিন্তু সে আরও জোরে চেঁচাতে লাগলো, হে দায়ূদ-সন্তান, আমার ওপর দয়া করুন।
49 তখন যীশু থেমে বললেন, ওকে ডাক;
তাতে লোকেরা সেই অন্ধকে ডেকে বলল, সাহস কর, ওঠ, যীশু তোমাকে ডাকছেন।
50 তখন সে নিজের কাপড় ফেলে লাফ দিয়ে উঠে যীশুর কাছে গেল।
51 যীশু তাকে বললেন, তুমি কি চাও? আমি তোমার জন্য কি করব? অন্ধ তাঁকে বলল, হে গুরুদেব, আমি দেখতে চাই।
52 যীশু তাকে বললেন, চলে যাও, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করল। তাতে সে তক্ষুনি দেখতে পেল এবং পথ দিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলো।