9
আবার তিনি তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের কেউ কেউ সপরাক্রমে ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না দেখা পর্যন্ত মৃত্যুর আস্বাদ লাভ করবে না।”
যীশুর রূপান্তর
ছয় দিন পরে যীশু কেবলমাত্র পিতর, যাকোব ও যোহনকে তাঁর সঙ্গে নিয়ে এক অতি উচ্চ পর্বতে গেলেন। সেখানে কেবলমাত্র তাঁরাই একান্তে ছিলেন। সেখানে তিনি তাঁদের সামনে রূপান্তরিত হলেন। তাঁর পরনের পোশাক উজ্জ্বল ও ধবধবে সাদা হয়ে উঠল। পৃথিবীর কোনও রজক পোশাককে সেরকম সাদা করতে পারে না। আর সেখানে এলিয় ও মোশি তাঁদের সামনে আবির্ভূত হয়ে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
পিতর যীশুকে বললেন, “রব্বি,* এখানে থাকা আমাদের পক্ষে ভালোই হবে। এখানে আমরা তিনটি তাঁবু স্থাপন করি, একটি আপনার জন্য, একটি মোশির জন্য ও একটি এলিয়ের জন্য।” (তাঁরা এত ভয় পেয়েছিলেন যে, কী বলতে হবে, তিনি তা বুঝতে পারেননি।)
তখন এক টুকরো মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল। সেই মেঘের ভিতর থেকে একটি স্বর ভেসে এল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমরা এঁর কথা শোনো।”
হঠাৎই তাঁরা চারদিকে তাকিয়ে আর কোনো মানুষকে দেখতে পেলেন না। কেবলমাত্র যীশু তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
পর্বত থেকে নেমে আসার সময় যীশু তাঁদের আদেশ দিলেন, মনুষ্যপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত, তাঁদের এই দর্শন লাভের কথা তাঁরা যেন কাউকে না বলেন। 10 তাঁরা বিষয়টি নিজেদেরই মধ্যে গোপন রাখলেন, আলোচনা করতে লাগলেন, “মৃতদের মধ্য থেকে উত্থান” এর তাৎপর্য কী!
11 তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “শাস্ত্রবিদরা কেন বলেন যে, এলিয়কে অবশ্যই প্রথমে আসতে হবে?”
12 যীশু উত্তর দিলেন, “একথা ঠিক, এলিয় প্রথমে এসে সব বিষয় পুনঃস্থাপিত করবেন। তাহলে, একথাও কেন লেখা আছে যে, মনুষ্যপুত্রকেও অনেক কষ্টভোগ করতে ও অগ্রাহ্য হতে হবে? 13 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয় এসে গেছেন। আর তাঁর বিষয়ে যেমন লেখা আছে, তেমনই লোকেরা তাঁর প্রতি তাদের ইচ্ছামতো দুর্ব্যবহার করেছে।”
যীশু ভূতগ্রস্ত ছেলেকে সুস্থ করলেন
14 তাঁরা যখন অন্য শিষ্যদের কাছে ফিরে এলেন তখন দেখলেন, অনেক লোক তাঁদের ঘিরে আছে ও শাস্ত্রবিদরা তাঁদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করছেন। 15 সমস্ত লোক যেই যীশুকে দেখতে পেল, তারা বিস্ময়ে অভিভূত হল ও দৌড়ে গিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানাল।
16 তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কী নিয়ে ওদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করছ?”
17 লোকেদের মধ্য থেকে একজন উত্তর দিল, “গুরুমহাশয়, আমি আমার ছেলেটিকে আপনার কাছে এনেছিলাম, ওকে এক অশুচি আত্মা ভর করেছে, তাই ও কথা বলতে পারে না। 18 সে যখনই তাকে ধরে, তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তার মুখে ফেনা ওঠে, সে দাঁত কিড়মিড় করে, আর আড়ষ্ট হয়ে যায়। আত্মাটিকে দূর করার জন্য আমি আপনার শিষ্যদের অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তাঁরা তা করতে পারেননি।”
19 যীশু উত্তর দিলেন, “ওহে অবিশ্বাসী প্রজন্ম, আমি আর কত কাল তোমাদের সঙ্গে থাকব? কত কাল তোমাদের জন্য ধৈর্য রাখতে হবে? ছেলেটিকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
20 তারা তাকে নিয়ে এল। অশুচি আত্মাটি যীশুকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিকে খুব জোরে মুচড়ে ধরল। সে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে লাগল, ও তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে লাগল।
21 যীশু ছেলেটির বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কত দিন থেকে ওর এরকম হচ্ছে?”
সে উত্তর দিল, “ছোটোবেলা থেকেই। 22 এ তাকে মেরে ফেলার জন্য বহুবার জলে ও আগুনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আপনি যদি কিছু করতে পারেন, আমাদের প্রতি সদয় হোন ও আমাদের সাহায্য করুন।”
23 যীশু বললেন, “যদি আপনি পারেন? যে বিশ্বাস করে, তার পক্ষে সবকিছুই সম্ভব।”
24 সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির বাবা আর্তনাদ করে উঠল, “আমি বিশ্বাস করি, অবিশ্বাস কাটিয়ে উঠতে আমাকে সাহায্য করুন।”
25 যীশু যখন দেখলেন, অনেক লোক ঘটনাস্থলের দিকে একসঙ্গে দৌড়ে আসছে, তিনি সেই অশুচি আত্মাকে ধমক দিলেন। তিনি বললেন, “ওহে কালা ও বোবা আত্মা, আমি তোমাকে আদেশ দিচ্ছি, ওর ভিতর থেকে বেরিয়ে এসো এবং আর কখনও ওর মধ্যে প্রবেশ কোরো না।”
26 আত্মাটি তীক্ষ্ণ চিৎকার করে তাকে প্রচণ্ডভাবে মুচড়ে দিয়ে তার মধ্যে থেকে বের হয়ে গেল। ছেলেটিকে মড়ার মতো পড়ে থাকতে দেখে অনেকে বলল, “ও মরে গেছে।” 27 কিন্তু যীশু তাকে হাত দিয়ে ধরলেন ও তার পায়ে ভর দিয়ে তাকে দাঁড় করালেন। এতে সে উঠে দাঁড়াল।
28 যীশু বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে, তাঁর শিষ্যেরা একান্তে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা কেন ওটিকে তাড়াতে পারলাম না?”
29 তিনি উত্তর দিলেন, “প্রার্থনা ছাড়া এই ধরনের আত্মা বের হতে চায় না।”
30 তাঁরা সেই স্থান ত্যাগ করে গালীলের মধ্য দিয়ে যাত্রা করলেন। যীশু চাইলেন না, যে তাঁরা কোথায় আছেন, কেউ সেকথা জানুক। 31 কারণ যীশু সেই সময় তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “মনুষ্যপুত্র মানুষের হাতে সমর্পিত হতে চলেছেন। তারা তাঁকে হত্যা করবে, আর তিন দিন পর তিনি উত্থাপিত হবেন।” 32 কিন্তু শিষ্যেরা তাঁর একথার অর্থ বুঝতে পারলেন না, আবার এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেও তাঁরা ভয় পেলেন।
শ্রেষ্ঠ কে?
33 পরে তাঁরা কফরনাহূমে এলেন। বাড়ির মধ্যে গিয়ে তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “পথে তোমরা কী নিয়ে তর্কবিতর্ক করছিলে?” 34 তাঁরা চুপ করে রইলেন, কারণ তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, তাঁরা এই নিয়ে পথে তর্কবিতর্ক করছিলেন।
35 সেখানে বসে, যীশু সেই বারোজনকে ডেকে বললেন, “কেউ যদি প্রথম হতে চায়, তাকে থাকতে হবে সকলের পিছনে, আর তাকে সকলের দাস হতে হবে।”
36 পরে তিনি একটি শিশুকে তাঁদের মাঝে দাঁড় করালেন। তাকে নিজের কোলে নিয়ে তিনি তাঁদের বললেন, 37 “আমার নামে যে এই শিশুদের একজনকেও গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে। আর যে আমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁকেই গ্রহণ করে।”
বিপক্ষ ও সপক্ষ
38 যোহন বললেন, “গুরুমহাশয়, আমরা একজনকে আপনার নামে ভূত তাড়াতে দেখে, তাকে সে কাজ করতে বারণ করেছিলাম, কারণ সে আমাদের দলের কেউ ছিল না।”
39 যীশু বললেন, “তাকে নিষেধ কোরো না। কেউ যদি আমার নামে কোনো অলৌকিক কাজ করে, পর মুহূর্তেই সে আমার নামে কোনও নিন্দা করতে পারবে না।” 40 কারণ যে আমাদের বিপক্ষে নয়, সে আমাদের সপক্ষে। 41 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, কেউ যদি খ্রীষ্টের লোক বলে তোমাদের এক পেয়ালা জল খেতে দেয়, সে কোনোভাবেই তার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে না।
42 “কিন্তু এই ছোটো শিশুরা যারা আমাকে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো একজনকে কেউ যদি পাপ করতে বাধ্য করে, তাহলে তার গলায় বড়ো একটি জাঁতা বেঁধে সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে দেওয়া তার পক্ষে ভালো হবে। 43 যদি তোমার হাত পাপের কারণ হয়, তা কেটে ফেলে দাও। দু-হাত নিয়ে নরকের অনির্বাণ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে অঙ্গহীন হয়ে জীবনে প্রবেশ করা ভালো। 44 সেখানে, ‘তাদের কীট মরে না, আর আগুন নির্বাপিত হয় না।’ 45 যদি আর তোমার পা পাপের কারণ হয়, তা কেটে ফেলে দাও। দুই পা নিয়ে নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে পঙ্গু হয়ে জীবনে প্রবেশ করা ভালো। 46 সেখানে, ‘তাদের কীট মরে না, আর আগুন নির্বাপিত হয় না।’§ 47 আর তোমার চোখ যদি পাপের কারণ হয়, তা উপড়ে ফেলে দাও। কারণ দুই চোখ নিয়ে নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে, বরং এক চোখ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা ভালো। 48 সেখানে,
“ ‘তাদের কীট মরে না,
আর আগুন নির্বাপিত হয় না।’*
49 প্রত্যেক ব্যক্তিকে আগুনে লবণাক্ত করা হবে।
50 “লবণ ভালো, কিন্তু লবণ যদি তার লবণত্ব হারায়, তাহলে তোমরা কীভাবে তা আবার লবণাক্ত করবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে লবণের গুণ বজায় রাখো ও পরস্পরের সঙ্গে শান্তিতে সহাবস্থান করো।”
* 9:5 হিব্রু ভাষায় রব্বি কথার অর্থ গুরুমশাই। 9:29 কতগুলি পাণ্ডুলিপিতে, “প্রার্থনা ও উপোস ছাড়া।” 9:44 প্রাচীন কিছু পাণ্ডুলিপি অনুসারে, 48 পদের কিছু অংশ এই পদে সংযুক্ত রয়েছে। § 9:46 প্রাচীন কিছু পাণ্ডুলিপি অনুসারে, 48 পদের কিছু অংশ এই পদে সংযুক্ত রয়েছে। * 9:48 যিশাইয় 66:24