5
জালে অনেক মাছ ধরা পড়ল।
এক দিন যখন লোকেরা তাঁর চারিদিকে প্রচণ্ড ভিড় করে ঈশ্বরের বাক্য শুনছিল, তখন তিনি গিনেষরৎ হ্রদের কূলে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর তিনি দেখতে পেলেন, হ্রদের কাছে দুটি নৌকা আছে, কিন্তু জেলেরা নৌকা থেকে নেমে জাল ধুচ্ছিল। তাতে তিনি ঐ দুটি নৌকার মধ্যে একটিতে, শিমোনের নৌকাতে, উঠে ডাঙা থেকে একটু দূরে যেতে তাঁকে অনুরোধ করলেন; আর তিনি নৌকায় বসে লোকদের উপদেশ দিতে লাগলেন। পরে কথা শেষ করে তিনি শিমোনকে বললেন, “তুমি গভীর জলে নৌকা নিয়ে চল, আর মাছ ধরবার জন্য তোমাদের জাল ফেল।” শিমোন এর উত্তরে বললেন, “হে মহাশয়, আমরা সারা রাত পরিশ্রম করেও কিছু পাইনি, কিন্তু আপনার কথায় আমি জাল ফেলব।” তাঁরা সেমত করায়, তখন মাছের বড় ঝাঁক ধরা পড়ল ও তাঁদের জাল ছিঁড়তে লাগল; তাতে তাঁদের যে অংশীদারেরা অন্য নৌকায় ছিলেন, তাঁদের তাঁরা সংকেত দিলেন, যেন তাঁরা এসে তাঁদের সঙ্গে সাহায্য করেন। কারণ তাঁরা দুটি নৌকা মাছে এমন পূর্ণ করলেন যে নৌকা দুটি ডুবে যাচ্ছিল। এসব দেখে শিমোন পিতর যীশুর হাঁটুর উপরে পড়ে বললেন, “আমার কাছ থেকে চলে যান, কারণ, হে প্রভু, আমি পাপী।” কারণ জালে এত মাছ ধরা পড়েছিল বলে তিনি ও যাঁরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন, সবাই প্রচণ্ড আশ্চর্য্য হয়েছিলেন; 10 আর সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও যোহন, যাঁরা শিমোনের অংশীদার ছিলেন, তাঁরাও তেমনই আশ্চর্য্য হয়েছিলেন। তখন যীশু শিমোনকে বললেন, “ভয় কর না, এখন থেকে তুমি মানুষ ধরবে।” 11 পরে তাঁরা নৌকা ডাঙায় এনে সমস্ত ত্যাগ করে তাঁর অনুগামী হলেন।
যীশু একজন কুষ্ঠী ও একজন অসার লোককে সুস্থ করেন।
12 একবার তিনি কোনও এক শহরে ছিলেন এবং সেখানে এক জনের সমস্ত শরীরে কুষ্ঠ রোগ ছিল; সে যীশুকে দেখে উপুড় হয়ে পড়ে অনুরোধ করে বলল, “প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুদ্ধ করতে পারেন।” 13 তখন তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলেন, তিনি বললেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুদ্ধ হয়ে যাও; আর তখনই তার কুষ্ঠ ভালো হয়ে গেল। 14 পরে তিনি তাকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, “এই কথা কাউকেও কিছু বলো না; কিন্তু যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও এবং লোকদের কাছে তোমার বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য মোশির দেওয়া আদেশ অনুযায়ী নৈবেদ্য উৎসর্গ কর, তাদের কাছে সাক্ষ্য হওয়ার জন্য যে তুমি সুস্থ হয়েছ।” 15 কিন্তু তাঁর বিষয়ে নানা খবর আরও বেশি করে ছড়াতে লাগল; আর কথা শুনবার জন্য এবং নিজেদের রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগল। 16 কিন্তু তিনি প্রায়ই কোন না কোন নির্জন স্থানে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যেতেন ও প্রার্থনা করতেন।
যীশু পক্ষাঘাত রোগীকে সুস্থ করলেন।
17 আর এক দিন তিনি উপদেশ দিচ্ছিলেন এবং ফরীশীরা ও ব্যবস্থা গুরুরা কাছেই বসেছিল; তারা গালীল ও যিহুদিয়ার সমস্ত গ্রাম এবং যিরুশালেম থেকে এসেছিল; আর তাঁর সঙ্গে প্রভুর শক্তি উপস্থিত ছিল, যেন তিনি সুস্থ করেন। 18 আর দেখ, কিছু লোক মাদুরে করে একজন পক্ষাঘাত রুগীকে আনল, তারা তাকে ভিতরে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে চেষ্টা করল। 19 কিন্তু ভিড়ের জন্য ভিতরে যাবার রাস্তা না পাওয়াতে তারা ঘরের ছাদে উঠল এবং টালি সরিয়ে তার মধ্য দিয়ে মাদুর শুদ্ধ তাকে মাঝখানে যীশুর কাছে নামিয়ে দিল। 20 তাদের বিশ্বাস দেখে তিনি বললেন, “হে বন্ধু, তোমার সমস্ত পাপ ক্ষমা হল।” 21 তখন ধর্মশিক্ষকরা ও ফরীশীরা এই তর্ক করতে লাগল, এ কে যে ঈশ্বরনিন্দা করছে? কেবল ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? 22 যীশু তাদের চিন্তা বুঝতে পেরে তাদের বললেন, “তোমরা মনে মনে কেন তর্ক করছ?” 23 কোনটা বলা সহজ, তোমার পাপ ক্ষমা হল বলা, না তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও বলা? 24 কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে, এটা যেন তোমরা জানতে পার, এই জন্য তিনি সেই পক্ষঘাতী রুগীকে বললেন, তোমাকে বলছি, ওঠ, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। 25 তাতে সে তখনই তাদের সামনে উঠে দাঁড়াল এবং নিজের বিছানা তুলে নিয়ে ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে নিজের বাড়ি চলে গেল। 26 তখন সবাই খুবই আশ্চর্য্য হল, আর তারা ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল এবং ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে বলতে লাগল, আজ আমরা অতিআশ্চর্য্য ব্যাপার দেখলাম।
লেবির আহ্বান। সে বিষয়ে যীশুর শিক্ষা।
27 এই ঘটনার পরে সেখান থেকে তিনি চলে গেলেন এবং দেখলেন, লেবি নামে একজন কর আদায়কারী কর জমা নেওয়ার জায়গায় বসে আছেন; তিনি তাঁকে বললেন, “আমার সঙ্গে এস।” 28 তাতে তিনি সমস্ত কিছু ত্যাগ করে উঠে তাঁর সঙ্গে চলে গেলেন। 29 পরে লেবি নিজের বাড়িতে তাঁর জন্য সুন্দর এক ভোজের আয়োজন করলেন এবং অনেক কর আদায়কারীরাও আরো অন্য লোকেরাও তাঁদের সঙ্গে ভোজনে বসেছিল। 30 তখন ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা তাঁর শিষ্যদের কাছে অভিযোগ করে বলতে লাগল, “তোমরা কেন কর আদায়কারী ও অন্যান্য পাপী লোকেদের সঙ্গে ভোজন পান করছ?” 31 যীশু এর উত্তরে তাদের বললেন, “সুস্থ লোকদের ডাক্তার দেখাবার দরকার নেই, কিন্তু অসুস্থদের প্রয়োজন আছে। 32 আমি ধার্ম্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদেরকেই ডাকতে এসেছি, যেন তারা মন ফেরায়।”
উপবাস বিষয়ে যীশুকে প্রশ্ন।
33 পরে তারা তাঁকে বলল, “যোহনের শিষ্যরা প্রায়ই উপবাস করে ও প্রার্থনা করে, ফরীশীরাও সেরকম করে; কিন্তু তোমার শিষ্যেরা ভোজন পান করে থাকে।” 34 যীশু তাদের বললেন, “বর সঙ্গে থাকতে তোমরা কি বাসর ঘরের লোকেরা উপবাস করতে পার? 35 কিন্তু দিন আসবে; আর যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে নেওয়া হবে, তখন তারা উপবাস করবে।” 36 আরও তিনি তাদের একটি উপমা দিলেন, তা এমন, কেউ নতুন কাপড় থেকে টুকরো ছিঁড়ে পুরনো কাপড়ে লাগায় না; সেটা করলে নতুনটাও ছিঁড়তে হয় এবং পুরানো কাপড়েও সেই নতুন কাপড়ের তাপ্পি মিলবে না। 37 আর লোকে পুরাতন চামড়ার থলিতে নতুন আঙুরের রস রাখে না; রাখলে চামড়ার থলিগুলি ফেটে যায়, তাতে দ্রাক্ষারস পড়ে যায়, চামড়ার থলিগুলিও নষ্ট হয়। 38 কিন্তু লোকে নূতন চামড়ার থলিতে টাটকা দ্রাক্ষারস রাখে। 39 আর পুরনো আঙ্গুরের রস পান করার পর কেউ টাটকা চায় না, কারণ সে বলে, পুরনোই ভাল।