রূত
গ্রন্থস্বত্ব
রূথ পুস্তকটি এর গ্রন্থাকারের নামকে নির্দিষ্টভাবে বলে না। পরম্পরা হলো এই যে রূথ পুস্তকটি ভাববাদী শমূয়েলের দ্বারা লিখিত হয়েছিল। সর্বকালের রচনার মধ্যে একে অত্যন্ত সুন্দর ছোট গল্প হিসাবে অভিহিত করা হয়। পুস্তকটির সর্বশেষ বাক্য সমূহ রূথকে তার নাতি দাউদের সঙ্গে সংযুক্ত করে (রূথ 4:17-22), তাই আমরা জানি এটা তার অভিষেকের পরে লিখিত হয়েছিল।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 1030 থেকে 1010 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
রূথের পুস্তকে ঘটনাবলীর যে দিন রয়েছে তা মিশর থেকে নির্গমণের দিনের সাথে বন্ধনযুক্ত আছে যেহেতু রূথের ঘটনাবলী বিচারকতৃগণের দিন পর্যন্ত এবং বিচারকগণের দিন কাল বিজয়লাভের সঙ্গে বাঁধা আছে।
গ্রাহক
রূথের গ্রাহক দের কে প্রত্যক্ষভাবে চিহ্নিত করা হয় না। যেহেতু 4:22 পদে দাউদের উল্লেখ আছে সেইহেতু অনুমানপুর্বকভাবে, সংযুক্ত রাজতন্ত্রের দিন কালের মধ্যে এটাকে প্রকৃতভাবে লেখা হয়েছিল।
উদ্দেশ্য
রূথের পুস্তকটি ইস্রায়েলীদের দেখিয়েছিল আশ্বীর্বাদকে একমাত্র আজ্ঞাকারিতা নিয়ে আসতে পারে। এটা তাদেরকে তাদের ঈশ্বরের প্রেম, বিশ্বস্ত প্রকৃতিকে দেখিয়েছিল। পুস্তকটি প্রদর্শন করে যে ঈশ্বর তার সন্তানদের ক্রন্দনে সাড়া দেন। তিনি যা প্রচার করেন তাই তিনি অভ্যাস করেন। তাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখা নাওমি এবং রূথের পক্ষে তিনি যোগানদাতা হন, দুই বিধবার একটি ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত স্বল্প উপাদান দেখায় যে তিনি সমাজচ্যুতদের জন্য যত্ন গ্রহণ করেন ঠিক যেমন তিনি আমাদের করতে বলেন (যিরমিয় 22:16; যাকোব 1:27)।
বিষয়
মুক্তি
রূপরেখা
1. নাওমি এবং তার পরিবার দুর্গতিকে দেখেন — 1:1-22
2. নাওমির জ্ঞাতি বোয়াসের সঙ্গে রূথ দেখা করেন যখন সে খেতে শস্য মাড়াই করছিল — 2:1-23
3. নাওমি রূথকে নির্দেশ দেন তাকে বোয়াসের কাছে যেতে — 3:1-18
4. রূথ মুক্তি পায় এবং নাওমি পুন:প্রতিষ্ঠিত হয় — 4:1-22
1
নয়মী ও রূত।
আর বিচারকর্*হাকিম (রাজনৈতিক নেতা) ইসরায়েলীদের জীবনে নির্দেশ দিতেন ত্তৃগনের শাসনের দিনের একবার দেশে দূর্ভিক্ষ হয়। আর বৈৎলেহম-যিহূদার একটি লোক, তার স্ত্রী ও দুই ছেলে মোয়াব দেশে বাস করতে যায়। সেই লোকটী নাম ইলীমেলক, তার স্ত্রীর নাম নয়মী এবং তার দুই ছেলের নাম মহলোন ও কিলিয়োন; এরা বৈৎলেহম-যিহূদা নিবাসী ইফ্রাথীয়। এরা মোয়াব দেশে গিয়ে সেখানে থেকে গেল। পরে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল, তাতে সে ও তার দুই ছেলে অবশিষ্ট থাকল। পরে সেই দুইজনে দুই মোয়াবীয়া মেয়েকে বিয়ে করল। এক জনের নাম অর্পা আরেকজনের নাম রূত। আর তারা অনুমান দশ বছর ধরে সেই জায়গায় বাস করল। পরে মহলোন ও কিলিয়োন এই দুই জনই মরে গেল, তাতে নয়মী স্বামীহীন ও পুত্রহীন হয়ে অবশিষ্টা থাকল। তখন সেই দুই ছেলের স্ত্রীদেরকে সঙ্গে নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে ফিরে যাবার জন্য উঠল; কারণ সে মোয়াব দেশে শুনতে পেয়েছিল যে, সদাপ্রভু নিজের প্রজাদের সাহায্য করে তাদেরকে খাবার দিয়েছেন। সে ও তার দুই ছেলের স্ত্রী নিজের বাসস্থান থেকে বের হল এবং যিহূদা দেশে ফিরে যাবার জন্য পথে চলতে লাগল। তখন নয়মী দুই ছেলের স্ত্রীদেরকে বলল, “তোমরা নিজের নিজের মায়ের বাড়িতে ফিরে যাও; মৃতদের প্রতি ও আমার প্রতি তোমরা যেমন দয়া করেছ, সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি সেরকম দয়া করুন। তোমরা উভয়ে যেন স্বামীর বাড়িতে বিশ্রাম পাও, সদাপ্রভু তোমাদেরকে এই বর দিন।” পরে সে তাদেরকে চুম্বন করল; তাতে তারা উচ্চঃস্বরে কাঁদল। 10 আর তারা তাকে বলল, “না, আমরা তোমারই সাথে তোমার লোকেদের কাছে ফিরে যাব।” 11 নয়মী বলল, “হে আমার বত্সারা, ফিরে যাও; তোমরা আমার সঙ্গে কেন যাবে? তোমাদের স্বামী হবার জন্য এখনো কি আমার গর্ভে সন্তান আছে? 12 হে আমার বত্সরা, ফিরে চলে যাও; কারণ আমি বৃদ্ধা, আবার বিয়ে করতে পারি না; আর আমার প্রত্যাশা আছে, এই বলে যদি আমি আজ রাতে বিয়ে করি আর যদি ছেলেও প্রসব করি, 13 তবে তোমরা কি তাদের বয়ঃপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? তোমরা কি সে জন্য বিয়ে করতে নিবৃত্তা থাকবে? হে আমার বত্সরা, তা নয়, তোমাদের জন্য আমার বড় দুঃখ হয়েছে; কারণ সদাপ্রভুর হাত আমার বিরুদ্ধে প্রসারিত হয়েছে।” 14 পরে তারা আবার উচ্চঃস্বরে কাঁদল এবং অর্পা নিজের শাশুড়ীকে চুম্বন করল, কিন্তু রূত তার প্রতি অনুরক্তা থাকল। 15 তখন সে বলল, “ঐ দেখ, তোমার যা নিজের লোকেদের ও নিজের দেবতার কাছে ফিরে গেল, তুমিও তোমার জাএর পিছনে পিছনে ফিরে যাও।” 16 কিন্তু রূত বলল, “তোমাকে ত্যাগ করে যেতে, তোমার পিছনে চলার থেকে ফিরে যেতে, আমাকে অনুরোধ কর না; তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাব এবং তুমি যেখানে থাকবে, আমিও সেখানে থাকব; তোমার লোকই আমার লোক, 17 তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর; তুমি যেখানে মারা যাবে, আমিও সেখানে মারা যাব, সে জায়গায় (পরে) কবর প্রাপ্ত হব; কেবল মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই যদি আমাকে ও তোমাকে পৃথক করতে পারে, তবে সদাপ্রভু আমাকে অমুক ও ততোধিক দন্ড দিন।” 18 যখন সে দেখল, তার সঙ্গে যেতে রূত সুনিশ্চিত আছে, তখন সে তাকে আর কিছু বলল না। 19 পরে তারা দুই জন চলতে চলতে শেষে যখন বৈৎলেহমে উপস্থিত হল, তখন তাদের বিষয়ে সমস্ত নগরে জনরব হল; স্ত্রী লোকেরা বলল, “এ কি নয়মী?” 20 সে তাদেরকে বলল, “আমাকে নয়মী [মনোরমা] বল না, বরং মারা [তিক্তা] বলে ডাক, কারণ সর্বশক্তিমান আমার প্রতি খুব তিক্ত ব্যবহার করেছেন। 21 আমি পরিপূর্ণা হয়ে যাত্রা করেছিলাম, এখন সদাপ্রভু আমাকে শূন্যা করে ফিরিয়ে আনলেন। তোমরা কেন আমাকে নয়মী বলে ডাকছ? সদাপ্রভু তো আমার বিপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন, সর্বশক্তিমান আমাকে নিগ্রহ করেছেন।” 22 এই ভাবে নয়মী ফিরে আসল, তার সঙ্গে তার ছেলের স্ত্রী মোয়াবীয়া রূত মোয়াব দেশ থেকে আসল; যব কাটা আরম্ভ হলেই তারা বৈৎলেহমে উপস্থিত হল।

*1:1 হাকিম (রাজনৈতিক নেতা) ইসরায়েলীদের জীবনে নির্দেশ দিতেন