14
অবশালোম জেরুশালেমে ফিরে এল
1 সরূয়ার ছেলে যোয়াব জানতেন যে অবশালোমের জন্য রাজার প্রাণ আকাঙ্ক্ষিত হয়ে আছে। 2 তাই যোয়াব তকোয়ে একজন লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে একজন চালাক-চতুর মহিলাকে আনিয়েছিলেন। তিনি মহিলাটিকে বললেন, “শোক করার ভান কোরো। শোক পালনের উপযোগী পোশাক পরে থেকো, ও কোনও সাজগোজ কোরো না বা তেলও মেখো না। এমন একজন মহিলার মতো আচরণ কোরো যে দীর্ঘদিন ধরে মরা মানুষের জন্য শোকপ্রকাশ করে চলেছে। 3 পরে রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে এই কথাগুলি বোলো।” এই বলে যোয়াব তার মুখে কথা বসিয়ে দিলেন।
4 তকোয়ের মহিলাটি রাজার কাছে গিয়ে, তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য মাটিতে উবুড় হয়ে পড়েছিল ও বলল, “হে মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন!”
5 রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার অসুবিধাটি কী?”
সে বলল, “আমি একজন বিধবা নারী; আমার স্বামী মারা গিয়েছে। 6 আপনার এই দাসীর—আমার দুই ছেলে ছিল। মাঠে তারা দুজন পরস্পরের সঙ্গে মারপিট করছিল, আর কেউ তাদের ছাড়াতে পারছিল না। একজন অন্যজনকে আঘাত করল ও তাকে মেরে ফেলেছিল। 7 এখন সম্পূর্ণ গোষ্ঠী আপনার দাসীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে; তারা বলছে, ‘যে তার ভাইকে মেরে ফেলেছে তাকে আমাদের হাতে তুলে দাও, যেন আমরা তার সেই ভাইয়ের প্রাণের পরিবর্তে তাকে হত্যা করতে পারি, যাকে সে খুন করল; তখন আর সম্পত্তির উত্তরাধিকারীও কেউ থাকবে না।’ তারা আমার কাছে অবশিষ্ট একমাত্র জ্বলন্ত কয়লাটিকেও নিভিয়ে দিতে চাইছে, পৃথিবীর বুকে আমার স্বামীর নাম বা বংশ, কোনো কিছুই আর রাখতে চাইছে না।”
8 রাজা মহিলাটিকে বললেন, “বাড়ি ফিরে যাও, আমি তোমার স্বপক্ষে হুকুম জারি করে দিচ্ছি।”
9 কিন্তু তকোয় থেকে আসা মহিলাটি তাঁকে বলল, “আমার প্রভু মহারাজ আমায় ও আমার পরিবারকে ক্ষমা করুন, এবং মহারাজ ও তাঁর সিংহাসন নির্দোষ থাকুক।”
10 রাজামশাই উত্তর দিলেন, “কেউ যদি তোমায় কিছু বলে, তবে তাদের আমার কাছে নিয়ে এসো, তারা আর তোমায় জ্বালাতন করবে না।”
11 সে বলল, “তবে মহারাজ তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে শপথ করুন, যেন রক্তের প্রতিশোধকারী আর সর্বনাশ করতে না পারে, ও আমার ছেলেও যেন না মরে।”
“জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি,” তিনি বললেন, “তোমার ছেলের মাথার একটি চুলও মাটিতে পড়বে না।”
12 তখন সেই মহিলাটি বলল, “আপনার দাসীকে আমার প্রভু মহারাজের কাছে একটি কথা বলতে দিন।”
“বলো,” তিনি উত্তর দিলেন।
13 মহিলাটি বলল, “তবে কেন আপনি ঈশ্বরের প্রজাদের বিরুদ্ধে এরকম এক কৌশল অবলম্বন করলেন? মহারাজ যখন এরকম বলছেন, তিনি কি তখন নিজেকেই দোষী করে তুলছেন না, কারণ মহারাজ যে নিজেই তাঁর নির্বাসিত ছেলেকে ফিরিয়ে আনেননি?” 14 মাটিতে ঢেলে দেওয়া জল যেমন তুলে আনা যায় না, তেমনি আমাদেরও মরতেই হবে। কিন্তু ঈশ্বর এমনটি চান না; বরং, তিনি এমন কৌশল বের করলেন যেন একজন নির্বাসিত ব্যক্তি বরাবরের জন্য তাঁর কাছ থেকে নির্বাসিত হয়ে না থাকে।
15 “এখন আমার প্রভু মহারাজের কাছে আমি একথাই বলতে এসেছি, কারণ লোকেরা আমাকে ভয় দেখিয়েছিল। আপনার দাসী ভেবেছিল, ‘আমি মহারাজের কাছে একথা বলব; হয়তো তিনি তাঁর দাসীর প্রার্থনা মঞ্জুর করবেন। 16 হয়তো মহারাজ তাঁর দাসীকে সেই লোকটির হাত থেকে রক্ষা করতে রাজি হবেন, যে ঈশ্বরের উত্তরাধিকার থেকে আমাকে ও আমার ছেলে—দুজনকেই বঞ্চিত করতে চাইছে।’
17 “এখন আপনার দাসী আমি বলছি, ‘আমার প্রভু মহারাজের কথাই যেন আমার উত্তরাধিকার সুরক্ষিত করে, কারণ ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষেত্রে আমার প্রভু মহারাজ ঈশ্বরের এক দূতের মতোই। আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনার সঙ্গেই থাকুন।’ ”
18 তখন রাজামশাই মহিলাটিকে বললেন, “আমি যে প্রশ্নটি তোমাকে করতে চলেছি, সেটির উত্তর আমার কাছে লুকিয়ো না।”
“আমার প্রভু মহারাজ বলুন,” মহিলাটি বলল।
19 রাজামশাই জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার সঙ্গে এই সবে যোয়াবের হাত নেই তো?”
মহিলাটি উত্তর দিয়েছিল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনার প্রাণের দিব্যি, আমার প্রভু মহারাজ যা বলেন, সেখান থেকে কেউ ডাইনে বা বাঁয়ে ফিরতে পারে না। হ্যাঁ, আপনার দাস যোয়াবই এসব করতে আমাকে নির্দেশ দিলেন ও তিনিই আপনার দাসীর মুখে এই কথাগুলি বসিয়ে দিলেন। 20 বর্তমান পরিস্থিতি বদলানোর জন্যই আপনার দাস যোয়াব এসব করলেন। আমার প্রভু, ঈশ্বরের একজন দূতের মতোই জ্ঞানী—দেশে যা যা হয়, তিনি সেসব জানেন।”
21 রাজামশাই যোয়াবকে বললেন, “ঠিক আছে, আমি এরকমই করব। যাও, সেই যুবক অবশালোমকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।”
22 তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য যোয়াব মাটিতে উবুড় হয়ে পড়েছিলেন, ও রাজাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। যোয়াব বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আজই আপনার দাস জেনেছে যে সে আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ লাভ করেছে, কারণ মহারাজ তাঁর দাসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন।”
23 পরে যোয়াব গশূরে গিয়ে অবশালোমকে জেরুশালেমে ফিরিয়ে এনেছিলেন। 24 কিন্তু রাজামশাই বললেন, “তাকে নিজের বাসায় যেতে হবে; সে যেন আমার মুখদর্শন না করে।” অতএব অবশালোম নিজের বাসায় গেল ও রাজার মুখদর্শন করেনি।
25 সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে আর কেউ অবশালোমের মতো তার অপরূপ সুন্দর রূপের জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য হয়নি। তার মাথার তালু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত কোথাও একটুও খুঁত ছিল না। 26 যখনই সে তার মাথার চুল কাটাত—সে বছরে একবারই তার চুল কাটাত, কারণ সেগুলি তার পক্ষে খুব ভারী হয়ে যেত—সে সেগুলি ওজন করাতো, আর সেগুলির ওজন রাজকীয় মাপ অনুসারে হত 200 শেকল*অথবা, প্রায় 2.3 কিলোগ্রাম।
27 অবশালোমের তিনটি ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম হল। তার মেয়ের নাম তামর, আর সে খুব সুন্দরী হল।
28 অবশালোম রাজার মুখদর্শন না করে দুই বছর জেরুশালেমে বসবাস করল। 29 পরে অবশালোম রাজার কাছে পাঠানোর জন্য যোয়াবকে ডেকে পাঠিয়েছিল, কিন্তু যোয়াব তার কাছে আসতে চাননি। তাই সে দ্বিতীয়বার তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল, কিন্তু তাও তিনি আসতে রাজি হননি। 30 তখন সে তার দাসদের বলল, “দেখো, যোয়াবের ক্ষেতটি আমার ক্ষেতের পাশেই আছে, আর সে সেখানে যব বুনেছে। যাও, সেখানে আগুন লাগিয়ে দাও।” অবশালোমের দাসেরা তখন ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।
31 যোয়াব পরে অবশালোমের বাসায় গেলেন, ও তিনি তাকে বললেন, “তোমার দাসেরা কেন আমার ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে?”
32 অবশালোম যোয়াবকে বলল, “দেখুন, আমি আপনাকে খবর পাঠিয়ে বললাম, ‘এখানে আসুন, যেন আমি আপনাকে রাজার কাছে পাঠিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, “আমি কেন গশূর থেকে ফিরে এলাম? আমি সেখানে থাকলেই ভালো হত!” ’ আর এখন, আমি মহারাজের মুখদর্শন করতে চাই, ও আমি যদি দোষ করে থাকি, তিনি আমায় মেরে ফেলতে পারেন।”
33 তাই যোয়াব রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে সেকথা বললেন। তখন রাজামশাই অবশালোমকে ডেকে পাঠালেন, ও সে এসে রাজার সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়েছিল। রাজামশাই তাকে চুম্বন করলেন।