46
মিশর সম্পর্কে ভাববাণী
1 বিভিন্ন জাতি সম্পর্কে সদাপ্রভুর এই বাক্য, ভাববাদী যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল:
2 মিশর সম্পর্কে:
যোশিয়ের পুত্র যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে, ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজার, মিশরের রাজা ফরৌণ নখোর যে সৈন্যদলকে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে কর্কমীশে পরাস্ত করেন, তাদের সম্পর্কে এই বাক্য,
3 “বড়ো বা ছোটো, তোমাদের ঢালগুলি প্রস্তুত করো
ও সমরাভিযানে বের হও!
4 অশ্বগুলিকে সজ্জিত করো,
যুদ্ধাশ্বে আরোহণ করো!
শিরস্ত্রাণ পরে
তোমরা অবস্থান নাও!
তোমাদের বর্শাগুলি ঝকঝকে করো,
সব রণসাজ পরে নাও!
5 আমি কী দেখতে পাচ্ছি?
তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে,
তারা পিছনে অপসারণ করছে,
তাদের বীর যোদ্ধারা পরাস্ত হয়েছে।
পিছন দিকে না ফিরে
তারা দ্রুত পলায়ন করে,
তাদের চারদিকে কেবলই ভয়ের পরিবেশ,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
6 “দ্রুতগামী লোক পলায়ন করতে পারছে না,
শক্তিশালী লোকেরাও নিষ্কৃতি পাচ্ছে না।
উত্তর দিকে, ইউফ্রেটিস নদীর তীরে,
তারা হোঁচট খেয়ে পতিত হচ্ছে।
7 “নীলনদের মতো, নদীর উপচে পড়া জলরাশির মতো,
ওই যে উঠে আসছে, ও কে?
8 মিশর নীলনদের মতো উঠে আসছে,
যেমন নদীগুলিতে জলরাশি ফেঁপে ওঠে।
সে বলছে, ‘আমি উঠে সমস্ত পৃথিবীকে প্লাবিত করব,
আমি লোকসমেত সব নগর ধ্বংস করব।’
9 হে অশ্বেরা, তোমরা আক্রমণ করো!
ওহে রথারোহীরা, তোমরা উন্মত্তের মতো রথ চালাও!
হে যোদ্ধারা, তোমরা সমরাভিযান করো, কূশ ও পূটের লোকেরা, যারা ঢাল বহন করে,
লূদের লোকেরা, যারা ধনুকে শরসন্ধান করে।
10 কিন্তু সেদিনটি হল প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর,
এক প্রতিশোধের দিন, তাঁর শত্রুদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার দিন।
তরোয়াল তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্রাস করে যাবে,
যতক্ষণ না রক্তে তার পিপাসা নিবারিত হয়।
কারণ প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, উত্তরের দেশে,
ইউফ্রেটিস নদীর তীরে, বলি উৎসর্গ করবেন।
11 “হে মিশরের কুমারী-কন্যা,
তুমি গিলিয়দে গিয়ে মলম নিয়ে এসো।
কিন্তু তুমি বৃথাই অনেক ওষুধ ব্যবহার করছ,
তোমার রোগের কোনো প্রতিকার নেই।
12 জাতিগণ তোমার লজ্জার কথা শুনবে;
তোমার কান্নায় পৃথিবী পূর্ণ হবে।
এক যোদ্ধা অন্য যোদ্ধার উপরে পড়বে,
তারা উভয়েই একসঙ্গে পতিত হবে।”
13 মিশরকে আক্রমণ করার জন্য ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজারের আগমন সম্পর্কে, সদাপ্রভু ভাববাদী যিরমিয়কে এই বার্তা দিলেন:
14 “তোমরা মিশরে ঘোষণা করো, মিগ্দোলে একথা প্রচার করো;
মেম্ফিস ও তফন্হেষেও একথা গিয়ে বলো:
‘তোমরা নিজেদের অবস্থান নাও ও প্রস্তুত হও,
কারণ তরোয়াল তোমাদের চারপাশের সবাইকে গ্রাস করবে।’
15 কেন তোমার যোদ্ধারা ভূপাতিত হবে?
তারা দাঁড়াতে পারে না, কারণ সদাপ্রভু তাদের মাটিতে ফেলে দেবেন।
16 তারা বারবার হোঁচট খাবে;
তারা পরস্পরের উপরে গিয়ে পড়বে।
তারা বলবে, ‘ওঠো, চলো আমরা ফিরে যাই,
স্বদেশে, আমাদের আপনজনদের কাছে,
অত্যাচারীদের তরোয়াল থেকে অনেক দূরে।’
17 সেখানে তারা চিৎকার করে বলবে,
‘মিশরের রাজা ফরৌণ এক উচ্চশব্দ মাত্র;
সে তার সুযোগ হারিয়েছে।’
18 “আমার জীবনের দিব্যি,” রাজা ঘোষণা করেন,
যাঁর নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু,
“একজন আসবেন, যিনি পর্বতগুলির মধ্যে তাবোরের তুল্য,
সমুদ্রতীরের কর্মিল পাহাড়ের মতো।
19 তোমরা যারা মিশরে বসবাস করো,
নির্বাসনের জন্য তোমাদের জিনিসপত্র তুলে নাও,
কারণ মেম্ফিস নগরী পরিত্যক্ত হবে,
নিবাসীহীন ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে থাকবে।
20 “মিশর এক সুন্দরী বকনা-বাছুর,
কিন্তু উত্তর দিক থেকে তার বিরুদ্ধে
এক ডাঁশ-মাছি আসছে।
21 তার সৈন্যশ্রেণীরা বেতনভোগী,
তারা সব নধর বাছুরের মতো।
তারাও পিছন ফিরে একসঙ্গে পালাবে,
তারা তাদের স্থানে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারবে না,
কারণ বিপর্যয়ের দিন তাদের উপরে নেমে আসছে,
সেই সময়টি হল তাদের শাস্তি পাওয়ার।
22 মিশর পালিয়ে যাওয়া সাপের মতো হিস্হিস্ করবে,
যেভাবে সৈন্যদল সামনের দিকে এগিয়ে যায়;
তারা কুড়ুল নিয়ে তার বিরুদ্ধে আসবে,
যেমন লোকেরা গাছপালা কেটে নেয়।
23 তারা তার অরণ্য কেটে ফেলবে,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন,
“তা যতই গহন হোক না কেন।
তারা পঙ্গপাল অপেক্ষাও বহুসংখ্যক,
যাদের সংখ্যা গণনা করা যায় না।
24 মিশর-কন্যাকে লজ্জা দেওয়া হবে,
উত্তরের লোকদের হাতে সে সমর্পিত হবে।”
25 বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা বলেন: “আমি শাস্তি দিতে চলেছি থিব্স-নগরের*হিব্রু: নো-নগরের। আমোন-দেবের উপরে, ফরৌণের উপরে, মিশরের উপরে ও তার দেবদেবী ও রাজাদের উপরে, এবং তাদের উপরে, যারা মিশরের উপরে নির্ভর করে। 26 যারা তাদের প্রাণ হরণ করতে চায়, আমি তাদের হাতে তাদের সমর্পণ করব। তারা হল ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজার ও তার সৈন্যেরা। পরবর্তী সময়ে, মিশর অবশ্য লোক অধ্যূষিত হবে, যেমন তারা পূর্বে ছিল,” একথা সদাপ্রভু ঘোষণা করেন।
27 “আমার দাস যাকোব, তোমরা ভয় কোরো না;
ও ইস্রায়েল, তোমরা নিরাশ হোয়ো না।
আমি নিশ্চয়ই তোমাকে দূরবর্তী দেশ থেকে রক্ষা করব,
তোমার বংশধরদের নির্বাসনের দেশ থেকে উদ্ধার করব।
যাকোব পুনরায় শান্তি ও সুরক্ষা লাভ করবে,
আর কেউ তাকে ভয় দেখাতে পারবে না।
28 হে যাকোব, আমার দাস, তুমি ভয় কোরো না,
কারণ আমি তোমার সঙ্গে আছি,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
“যাদের মধ্যে আমি তোমাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম,
সেই অন্য সব জাতিকে যদিও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করি,
আমি তোমাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব না।
আমি কেবলমাত্র বিচার করে তোমাকে শাস্তি দেব,
আমি কোনোমতেই তোমাকে অদণ্ডিত রাখব না।”