30
“কিন্তু এখন তারাই আমাকে বিদ্রুপ করে,
যারা আমার থেকে বয়সে ছোটো,
যাদের বাবাদের আমি আমার মেষপাল-রক্ষক কুকুরদের সাথে
রাখতেও অবজ্ঞা করতাম।
তাদের হাতের শক্তি আমার কী কাজে লাগত,
যেহেতু তাদের প্রাণশক্তি তো তাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছে?
অভাব ও খিদের জ্বালায় জীর্ণশীর্ণ হয়ে
তারা রাতের বেলায় রৌদ্রদগ্ধ জমিতে
ও জনশূন্য পতিত জমিতে ঘুরে বেড়াত।*অথবা, তারা রাতের বেলায় রৌদ্রদগ্ধ জমি ও জনশূন্য পতিত জমি কামড়ে খেতো
ঝাড়-জঙ্গলে তারা লবণাক্ত শাক সংগ্রহ করত,
ও খেংরা ঝোপের মূল তাদের খাদ্যঅথবা, জ্বালানি হয়েছিল।
মানবসমাজ থেকে তারা বিতাড়িত হয়েছিল,
লোকজন যেভাবে চোরের পিছনে চিৎকার করে, সেভাবে তাদেরও পিছনেও চিৎকার করত।
তারা শুকনো নদীখাতে, পাষাণ-পাথরের খাঁজে
ও জমির ফাটলে বসবাস করতে বাধ্য হত।
ঝোপঝাড়ে তারা পশুদের মতো ডাক দিয়ে বেড়াত
ও লতাগুল্মের জঙ্গলে গাদাগাদি করে থাকত।
এক হীন ও অখ্যাত কুল হয়ে,
তারা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
 
“আর এখন সেই যুবকেরা গান গেয়ে গেয়ে আমাকে বিদ্রুপ করে;
আমি তাদের মাঝে এক জনশ্রুতিতে পরিণত হয়েছি।
10 তারা আমাকে ঘৃণা করে ও আমার কাছ থেকে দূরে সরে থাকে;
আমার মুখে থুতু ছিটাতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।
11 এখন যেহেতু ঈশ্বর আমার ধনুক বিতন্ত্রিত করেছেন ও আমাকে দুর্দশাগ্রস্ত করেছেন,
তাই আমার সামনে তারা সংযম ঝেড়ে ফেলেছে।
12 আমার ডানদিকে উপজাতিরা আক্রমণ করে;
তারা আমার পায়ের জন্য ফাঁদ বিছায়,
আমার বিরুদ্ধে তারা তাদের অবরোধ-পথ নির্মাণ করে।
13 তারা আমার পথ অবরুদ্ধ করে;
তারা আমাকে ধ্বংস করতে সফল হয়।
‘কেউ তাকে সাহায্য করতে পারবে না,’ তারা বলে।
14 তারা যেন এক প্রশস্ত ফাটলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসে;
ধ্বংসাবশেষের মাঝখান দিয়ে তারা ঘূর্ণিবেগে আসে।
15 আতঙ্ক আমাকে অভিভূত করে;
আমার সম্মান যেন বাতাসে উড়ে গিয়েছে,
আমার নিরাপত্তা মেঘের মতো অদৃশ্য হয়ে যায়।
 
16 “আর এখন আমার জীবনে ভাটার টান এসেছে;
কষ্টভোগের দিন আমাকে গ্রাস করেছে।
17 রাতের বেলায় আমার অস্থি বিদ্ধ হয়;
আমার বিরক্তিকর যন্ত্রণা কখনও বিশ্রাম নেয় না।
18 ঈশ্বর তাঁর মহাপরাক্রমে আমার কাছে পোশাকের মতো হয়ে গিয়েছেনঅথবা, আমার পোশাক আঁকড়ে ধরেন;
আমার জামার গলবন্ধের মতো তিনি আমাকে বেঁধে রেখেছেন।
19 তিনি আমাকে কাদায় ছুঁড়ে ফেলেছেন,
ও আমি ধুলো ও ভস্মের মতো হয়ে গিয়েছি।
 
20 “হে ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে আর্তনাদ করেছি, কিন্তু তুমি উত্তর দাওনি;
আমি উঠে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু তুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়েছ।
21 নির্মমভাবে তুমি আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছ;
তোমার হাতের শক্তি দিয়ে তুমি আমাকে আক্রমণ করেছ।
22 আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে তুমি আমাকে বাতাসের সামনে চালান করেছ;
তুমি আমাকে ঝড়ের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়েছ।
23 আমি জানি তুমি আমাকে মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাবে,
সেই স্থানে নিয়ে যাবে, যা সব জীবিতজনের জন্য নিরূপিত হয়ে আছে।
 
24 “একজন বিদীর্ণ মানুষ যখন তার চরম দুর্দশায় সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করে
তখন নিশ্চয় তার উপরে কেউ হস্তক্ষেপ করে না।
25 আমি কি বিপদগ্রস্তদের জন্য কাঁদিনি?
দরিদ্রদের জন্য আমার প্রাণ কি ব্যথিত হয়নি?
26 অথচ আমি যখন মঙ্গলের প্রত্যাশা করেছি, তখন অমঙ্গল এসেছে;
আমি যখন আলোর খোঁজ করেছি, তখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে।
27 আমার ভিতরের মন্থন কখনও থামেনি;
দিনের পর দিন আমাকে যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
28 আমি কলঙ্কিত হয়েছি, কিন্তু সূর্যের দ্বারা নয়;
জনসমাবেশে দাঁড়িয়ে আমি সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করেছি।
29 আমি শিয়ালদের ভাই হয়েছি,
প্যাঁচাদের সঙ্গী হয়েছি।
30 আমার চামড়া কালো হয়ে গিয়ে তাতে খোসা ছাড়ছে;
আমার শরীর জ্বরে পুড়ছে।
31 আমার বীণা শোকের সুর তুলছে,
ও আমার বাঁশি হাহাকারের শব্দ করছে।
 

*30:3 অথবা, তারা রাতের বেলায় রৌদ্রদগ্ধ জমি ও জনশূন্য পতিত জমি কামড়ে খেতো

30:4 অথবা, জ্বালানি

30:18 অথবা, আমার পোশাক আঁকড়ে ধরেন