7
শত-সেনাপতির বিশ্বাস
1 যীশু সকলের সামনে এই সমস্ত কথা বলার পর কফরনাহূমে ফিরে গেলেন। 2 সেখানে এক শত-সেনাপতির দাস, যে ছিল তাঁর প্রিয়পাত্র, রোগে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। 3 শত-সেনাপতি যীশুর কথা শুনেছিলেন। তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের কয়েকজন প্রাচীনকে যীশুর কাছে পাঠিয়ে অনুরোধ জানালেন, তিনি যেন এসে তাঁর দাসকে সুস্থ করেন। 4 তাঁরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে কাতর মিনতি জানালেন, “এই ব্যক্তি আপনার সাহায্য পাওয়ার যোগ্য, 5 কারণ তিনি আমাদের জাতিকে ভালোবাসেন, আর আমাদের সমাজভবনটি নির্মাণ করে দিয়েছেন।” 6 তাই যীশু তাঁদের সঙ্গে গেলেন।
যীশু শত-সেনাপতির বাড়ির কাছাকাছি এলে, তিনি তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে যীশুর কাছে বলে পাঠালেন, “প্রভু, আপনি নিজে কষ্ট করবেন না। আপনি আমার বাড়িতে আসবেন আমি এমন যোগ্য নই। 7 তাই আমি নিজেকেও আপনার কাছে যাওয়ার যোগ্য মনে করিনি। আপনি কেবলমাত্র মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস সুস্থ হবে। 8 কারণ আমিও কর্তৃত্বের অধীন একজন মানুষ এবং সৈন্যরা আমার অধীন। আমি তাদের একজনকে ‘যাও’ বললে সে যায়, অপরজনকে ‘এসো’ বললে সে আসে, আবার আমার দাসকে ‘এই কাজটি করো,’ বললে সে তা করে।”
9 একথা শুনে যীশু তার সম্পর্কে চমৎকৃত হলেন। তাঁকে যারা অনুসরণ করছিলেন তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, ইস্রায়েলের মধ্যেও আমি এমন প্রগাঢ় বিশ্বাস দেখতে পাইনি।” 10 তখন যে লোকদের তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখলেন, দাসটি সুস্থ হয়ে উঠেছে।
বিধবার পুত্রকে পুনর্জীবন দান
11 এর কিছুকাল পরেই যীশু নায়িন নামে এক নগরে গেলেন। তাঁর শিষ্যেরা ও বিস্তর লোক তাঁর সঙ্গী হল। 12 তিনি নগরদ্বারের কাছে এসে পৌঁছালেন। তখন দেখলেন, লোকেরা এক মৃত ব্যক্তিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার মা ছিল বিধবা এবং সে ছিল তার একমাত্র পুত্র। নগরের বিস্তর লোক তাদের সঙ্গে ছিল। 13 তাকে দেখে প্রভুর হৃদয় তার প্রতি করুণায় ভরে উঠল। তিনি তাকে বললেন, “কেঁদো না।”
14 তারপর তিনি এগিয়ে গিয়ে শবদেহ রাখা খাট স্পর্শ করলেন। আর যারা বাহক তারা দাঁড়িয়ে পড়ল। তিনি বললেন, “ওহে যুবক, আমি তোমাকে বলছি, তুমি ওঠো!” 15 মৃত মানুষটি উঠে বসে কথা বলতে লাগল। যীশু তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
16 এই দেখে তারা সকলে ভয়ে ও ভক্তিতে অভিভূত হল, ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল এবং তারা বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে এক মহান ভাববাদীর উদয় হয়েছে। ঈশ্বর তাঁর প্রজাদের সাহায্য করতে এসেছেন।” 17 যীশুর এই কীর্তির কথা যিহূদিয়ার সর্বত্র এবং সন্নিহিত অঞ্চলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ল।
যীশু ও বাপ্তিষ্মদাতা যোহন
18 যোহনের শিষ্যেরা এই সমস্ত কথা তাঁকে জানাল। 19 তিনি তাদের দুজনকে ডেকে প্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পাঠালেন, “যাঁর আসার কথা ছিল আপনিই কি তিনি না আমরা অন্য কারও প্রতীক্ষায় থাকব?”
20 তারা যখন যীশুর কাছে এল, তারা বলল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা করতে পাঠিয়েছেন, ‘যে মশীহের আবির্ভাবের কথা ছিল, সে কি আপনি, না আমরা অন্য কারও প্রতীক্ষায় থাকব?’ ”
21 ঠিক সেই সময়ে যীশু বহু রোগগ্রস্ত, পীড়িত ও মন্দ-আত্মাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করছিলেন; বহু অন্ধকেও দৃষ্টিশক্তি দান করছিলেন। 22 তাই তিনি সেই বার্তাবহদের উত্তর দিলেন, “তোমরা যা দেখলে, যা শুনলে, ফিরে গিয়ে সেসব যোহনকে জানাও। যারা অন্ধ তারা দৃষ্টি পাচ্ছে, যারা খোঁড়া তারা চলতে পারছে, যারা কুষ্ঠরোগী তারা শুচিশুদ্ধ হচ্ছে, যারা কালা তারা শুনতে পাচ্ছে, যারা মৃত তারা উত্থাপিত হচ্ছে ও যারা দরিদ্র তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে। 23 আর ধন্য সেই ব্যক্তি যে আমার কারণে বাধা পায় না।”
24 যোহনের বার্তাবাহকেরা চলে গেলে, যীশু সকলের কাছে যোহনের সম্পর্কে বলতে লাগলেন, “তোমরা মরুপ্রান্তরে কী দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে দুলছে এমন কোনো নলখাগড়া? 25 তা না হলে, তোমরা কী দেখতে গিয়েছিলে? মোলায়েম পোশাক পরা কোনো মানুষকে? তা নয়, যারা মূল্যবান পোশাক পরে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, তারা তো রাজপ্রাসাদে থাকে। 26 কিন্তু তোমরা কী দেখতে গিয়েছিলে? কোনো ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলি, ভাববাদীর চেয়েও মহত্তর একজনকে। 27 ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর সম্পর্কে লেখা আছে:
“ ‘আমি আমার বার্তাবাহককে তোমার আগে পাঠাব,
যে তোমার আগে তোমার জন্য পথ প্রস্তুত করবে।’*মালাখি 3:1
28 আমি তোমাদের বলছি, নারীর গর্ভে জন্মেছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যোহনের চেয়ে মহান আর কেউই নেই; তবুও ঈশ্বরের রাজ্যে যে নগণ্যতম সেও তাঁর চেয়ে মহান।”
29 সব লোক, এমনকি, কর আদায়কারীরাও, যীশুর শিক্ষা শুনে ঈশ্বরের পথকে সঠিক বলে স্বীকার করল, কারণ তারা বুঝতে পারল, যোহনের কাছে বাপ্তিষ্ম নিয়ে তারা ভুল করেনি। 30 কিন্তু ফরিশীরা ও শাস্ত্রবিদরা তাদের বিষয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা অগ্রাহ্য করল, কারণ তারা যোহনের কাছে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করেনি।
31 “তাহলে, কার সঙ্গে আমি এই প্রজন্মের লোকদের তুলনা করতে পারি? তারা কাদের মতো? 32 তারা সেইসব ছেলেমেয়ের মতো, যারা হাটেবাজারে বসে পরস্পরকে সম্বোধন করে বলে,
“ ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
কিন্তু তোমরা নৃত্য করলে না;
আমরা শোকগাথা গাইলাম,
কিন্তু তোমরা বিলাপ করলে না।’
33 বাপ্তিষ্মদাতা যোহন এসে রুটি খেলেন না বা দ্রাক্ষারস পান করলেন না, কিন্তু তোমরা বললে, ‘তিনি ভূতগ্রস্ত।’ 34 মনুষ্যপুত্র এলেন, খাওয়াদাওয়া করলেন, কিন্তু তোমরা বললে, ‘এই দেখো একজন পেটুক ও মদ্যপ, কর আদায়কারী ও পাপীদের বন্ধু।’ 35 কিন্তু প্রজ্ঞা তার অনুসরণকারীদের আচরণের দ্বারাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়।”
পাপীষ্ঠা নারী যীশুকে অভিষিক্ত করল
36 আর একজন ফরিশী আহার করার জন্য যীশুকে নিমন্ত্রণ করল। যীশু তার বাড়িতে গেলেন এবং খাবারের সময় আসনে হেলান দিয়ে বসলেন। 37 সেই নগরে একজন পাপীষ্ঠা নারী ছিল। যীশু ফরিশীর বাড়িতে খাবার খাচ্ছেন শুনে, সে একটি শ্বেতস্ফটিকের পাত্রে সুগন্ধি তেল নিয়ে এল। 38 সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে চোখের জলে তাঁর পা-দুটি ভিজিয়ে দিতে লাগল। তারপর সে তার চুল দিয়ে তাঁর পা দুটিকে মুছিয়ে দিয়ে চুম্বন করল এবং সেই সুগন্ধি তেল ঢেলে দিল।
39 এই ঘটনা দেখে আমন্ত্রণকর্তা ফরিশী মনে মনে ভাবল, “এই লোকটি যদি ভাববাদী হত, তাহলে বুঝতে পারত, কে তাঁকে স্পর্শ করছে এবং সে কী প্রকৃতির নারী! সে তো এক পাপীষ্ঠা!”
40 যীশু তাকে উত্তর দিলেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”
শিমোন বলল, “গুরুমহাশয়, বলুন।”
41 “এক মহাজনের কাছে দুজন ব্যক্তি ঋণ নিয়েছিল। একজন নিয়েছিল পাঁচশো দিনার,†এক দিনারের মূল্য সেই সময়ের একদিনের মজুরি, বা বেতনের সমান। অন্যজন পঞ্চাশ দিনার। 42 তাদের কারোরই সেই পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না, তাই তিনি দুজনেরই ঋণ মকুব করে দিলেন। এখন তাদের মধ্যে কে তাঁকে বেশি ভালোবাসবে?”
43 শিমোন উত্তর দিল, “আমার মনে হয়, যার বেশি ঋণ মকুব করা হয়েছিল, সেই।”
যীশু বললেন, “তুমি যথার্থ বিচার করেছ।”
44 তারপর তিনি সেই নারীর দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোককে দেখতে পাচ্ছ, আমি তোমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম, অথচ তুমি আমাকে পা-ধোওয়ার জল দিলে না। কিন্তু ও তার চোখের জলে আমার পা ভিজিয়ে দিল, আর তার চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দিল। 45 তুমি আমাকে একবারও চুম্বন‡এই চুম্বন স্বাগত জানানোর জন্য। করলে না, কিন্তু আমি এই বাড়িতে প্রবেশ করার সময় থেকেই এই নারী আমার পা-দুখানি চুম্বন করা থেকে বিরত হয়নি। 46 তুমি আমার মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করলে না, কিন্তু ও আমার পায়ে সুগন্ধি তেল ঢেলে অভিষেক করল। 47 তাই আমি তোমাকে বলছি, যেহেতু তার অজস্র পাপ ক্ষমা করা হয়েছে, সে আমাকে বেশি ভালোবেসেছে। কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্পই ভালোবাসে।”
48 তারপর যীশু সেই নারীকে বললেন, “তোমার সব পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।”
49 অন্য অতিথিরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল “ইনি কে, যে পাপও ক্ষমা করেন?”
50 যীশু সেই নারীকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমাকে পরিত্রাণ দিয়েছে, শান্তিতে চলে যাও।”