21
বিধবার দান
1 যীশু চোখ তুলে দেখলেন ধনী ব্যক্তিরা মন্দিরের ভাণ্ডারে উপহার দান করছে। 2 তিনি এক দরিদ্র বিধবাকেও খুব ছোটো দুটি তামার পয়সা*গ্রিক: দুই লেপ্টা (ভীষণ কম মূল্যের ইহুদি মুদ্রা) রাখতে দেখলেন। 3 তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই দরিদ্র বিধবা অন্য সবার চেয়ে বেশি দান করেছে। 4 কারণ এসব লোক তাদের প্রাচুর্য থেকে দান করেছে, কিন্তু সে তার দরিদ্রতা সত্ত্বেও, তার বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু ছিল, তা থেকে সর্বস্ব দিয়ে দিয়েছে।”
যুগের অন্তিমলগ্নের চিহ্ন
5 তাঁর কয়েকজন শিষ্য আলোচনা করে বলছিল যে, সুন্দর সুন্দর পাথর ও ঈশ্বরের কাছে নিবেদিত সব বস্তুতে মন্দিরটি কেমন সুশোভিত! কিন্তু যীশু বললেন, 6 “তোমরা এখানে যা দেখছ, এমন এক সময় আসবে, যখন এদের একটি পাথরও অন্যটির উপরে থাকবে না, সবকটিকেই ভূমিসাৎ করা হবে।”
7 তাঁরা জানতে চাইলেন, “গুরুমহাশয়, এ সমস্ত কখন ঘটবে? তার লক্ষণই বা কী, যা দেখে আমরা বুঝব যে, সে সমস্ত ঘটতে চলেছে?”
8 তিনি উত্তর দিলেন, “সতর্ক থেকো, তোমরা যেন প্রতারিত না হও। কারণ আমার নাম নিয়ে অনেকেই আসবে। তারা দাবি করে বলবে, ‘আমিই তিনি,’ আর ‘সেই কাল সন্নিকট।’ তোমরা তাদের অনুগামী হোয়ো না। 9 যুদ্ধ ও বিপ্লবের কথা শুনে তোমরা আতঙ্কিত হোয়ো না। প্রথমে এসব অবশ্যই ঘটবে, কিন্তু তখনই সমাপ্তি হবে না।”
10 এরপর তিনি তাঁদের বললেন, “এক জাতি অন্য জাতির বিপক্ষে, এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিপক্ষে অভিযান করবে। 11 বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি হবে, মহাকাশে দেখা যাবে বহু ভীতিকর দৃশ্য ও বড়ো বড়ো নিদর্শন।
12 “কিন্তু এসব ঘটার আগে তারা তোমাদের গ্রেপ্তার করবে ও নির্যাতন করবে। তারা তোমাদের সমাজভবনের কর্তৃপক্ষের হাতে সমর্পণ করবে ও কারাগারে নিক্ষেপ করবে। রাজা ও প্রদেশপালদের দরবারে তোমাদের হাজির করানো হবে, আর আমার নাম স্বীকার করার কারণেই সে সমস্ত ঘটবে। 13 এর পরিণামে, তোমরা তাদের কাছে সাক্ষ্যদানের সুযোগ লাভ করবে। 14 কিন্তু কীভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে, সে বিষয়ে আগেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হওয়ার জন্য মনস্থির করবে। 15 কারণ আমি তোমাদের এমন বাক্য ও জ্ঞান দান করব, যা তোমাদের প্রতিপক্ষ প্রতিরোধ ও খণ্ডন করতে ব্যর্থ হবে। 16 এমনকি, তোমাদের বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়পরিজন ও বন্ধুবান্ধব তোমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তারা তোমাদের কাউকে কাউকে মৃত্যুমুখে সমর্পণ করবে। 17 আর আমার কারণে তোমরা সকলের কাছে ঘৃণিত হবে। 18 কিন্তু তোমাদের মাথার একটি চুলও বিনষ্ট হবে না। 19 তোমরা যদি অবিচলিত থাকো, তাহলে জীবন লাভ করবে।
20 “যখন তোমরা দেখবে সৈন্যসামন্ত জেরুশালেম নগরীকে অবরোধ করেছে, তখন জানবে যে তার ধ্বংসের দিন এগিয়ে এসেছে। 21 তখন যারা যিহূদিয়ায় থাকবে, তারা যেন পার্বত্য অঞ্চলে পালিয়ে যায়, যারা নগরে থাকে, তারা যেন বাইরে চলে যায়; আর যারা গ্রামাঞ্চলে থাকবে, তারা যেন নগরের ভিতরে প্রবেশ না করে। 22 কারণ সেসময় হবে প্রতিশোধের সময়, শাস্ত্রের সমস্ত বাক্য পূর্ণ হওয়ার সময়। 23 সেই সময় গর্ভবতী নারীদের ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের কতই না ভয়ংকর কষ্ট হবে! দেশের উপর ঘনিয়ে আসবে চরম দুর্গতি, এই জাতির উপরে নেমে আসবে ঈশ্বরের ক্রোধ। 24 তরোয়ালের আঘাতে তাদের মৃত্যু হবে, বন্দিরূপে অন্য সব জাতির কাছে নির্বাসিত হবে। অইহুদিদের জন্য নিরূপিত সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জেরুশালেম অইহুদিদের দ্বারা পদদলিত হবে।
25 “আর সূর্য, চাঁদ ও তারার মধ্যে বিভিন্ন অদ্ভুত চিহ্ন দেখা যাবে। উত্তাল সমুদ্রের গর্জনে ও অদ্ভুত ঢেউয়ের সামনে পৃথিবীর সমস্ত জাতি যন্ত্রণাগ্রস্ত ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। 26 পৃথিবীতে যা কিছু ঘটবে, সেই কথা ভেবে মানুষ আতঙ্কে মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে, কারণ জ্যোতিষ্কমণ্ডল তখন প্রকম্পিত হবে। 27 সেই সময়ে তারা দেখতে পাবে, মনুষ্যপুত্র পরাক্রমে ও মহামহিমায় মেঘে করে আবির্ভূত হবেন। 28 এই সমস্ত ঘটনা যখন ঘটতে শুরু হবে, তখন তোমরা ঊর্ধ্বদৃষ্টি কোরো ও মাথা উঁচু কোরো, কারণ তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।”
29 তিনি তাদের এই রূপকটিও বললেন: “ডুমুর গাছ ও অন্য সব গাছের দিকে তাকিয়ে দেখো। 30 সেগুলি যখন নতুন পাতায় সজ্জিত হয়ে ওঠে, তা দেখে তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারো, গ্রীষ্মকাল সন্নিকট। 31 সেরকম, তোমরা যখন এই সমস্ত ঘটতে দেখবে, তখন জেনো যে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট।
32 “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এসব না ঘটা পর্যন্ত এই প্রজন্মের অবলুপ্তি কিছুতেই হবে না। 33 আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত হবে, কিন্তু আমার বাক্য কখনও লুপ্ত হবে না।
34 “সতর্ক থেকো, নইলে উচ্ছৃঙ্খলতা, মত্ততা ও জীবনের দুশ্চিন্তা তোমাদের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তুলবে। 35 আর সেদিনটি ফাঁদের মতো অপ্রত্যাশিতভাবে সমগ্র পৃথিবীর প্রত্যেক অধিবাসীর উপরেই ঘনিয়ে আসবে। 36 সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রেখো ও প্রার্থনা কোরো, যেন সন্নিকট সব ঘটনা থেকে তোমরা অব্যাহতি পাও এবং মনুষ্যপুত্রের সামনে দাঁড়াবার সামর্থ্য লাভ করো।”
37 যীশু প্রতিদিন মন্দিরে গিয়ে শিক্ষা দিতেন এবং প্রতি সন্ধ্যায় রাত্রি কাটানোর জন্য জলপাই নামের পর্বতের অভিমুখে বেরিয়ে পড়তেন। 38 তাঁর বাণী শোনার জন্য লোকেরা খুব ভোরবেলাতেই মন্দিরে এসে উপস্থিত হত।