8
যীশু এক কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করলেন
1 যীশু যখন পর্বতের উপর থেকে নেমে এলেন তখন অনেক লোক তাঁকে অনুসরণ করতে লাগল। 2 তখন একজন কুষ্ঠরোগী এসে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে বলল, “প্রভু, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে শুচিশুদ্ধ করতে পারেন।”
3 যীশু তাঁর হাত বাড়িয়ে সেই ব্যক্তিকে স্পর্শ করলেন। তিনি বললেন, “আমার ইচ্ছা, তুমি শুচিশুদ্ধ হও!” তৎক্ষণাৎ তার কুষ্ঠরোগ দূর হয়ে গেল। 4 তখন যীশু তাকে বললেন, “দেখো, তুমি একথা কাউকে বোলো না, কিন্তু যাজকদের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও এবং মোশির আদেশমতো তাদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নৈবেদ্য উৎসর্গ করো।”
শত-সেনাপতির বিশ্বাস
5 যীশু কফরনাহূমে প্রবেশ করলে একজন শত-সেনাপতি তাঁর কাছে এসে সাহায্যের নিবেদন করলেন। 6 তিনি বললেন, “প্রভু, আমার দাস পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে, ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।”
7 যীশু তাকে বললেন, “আমি গিয়ে তাকে সুস্থ করব।”
8 সেই শত-সেনাপতি উত্তরে বললেন, “প্রভু, আপনি আমার বাড়িতে*গ্রিক: ছাদের নিচে। আসবেন আমি এমন যোগ্য নই। কেবলমাত্র মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস সুস্থ হবে। 9 কারণ আমিও কর্তৃত্বের অধীন একজন মানুষ এবং সৈন্যরা আমার অধীন। আমি তাদের একজনকে ‘যাও’ বললে সে যায়, অপরজনকে ‘এসো’ বললে সে আসে, আবার আমার দাসকে ‘এই কাজটি করো,’ বললে সে তা করে।”
10 একথা শুনে যীশু বিস্মিত হয়ে তাঁর অনুসরণকারীদের উদ্দেশে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ইস্রায়েলে আমি এমন কারও সন্ধান পাইনি, যার মধ্যে এত গভীর বিশ্বাস আছে। 11 আমি তোমাদের বলে রাখছি, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশ থেকে বহু মানুষই আসবে এবং এসে অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের সঙ্গে স্বর্গরাজ্যে তাদের আসন গ্রহণ করবে। 12 কিন্তু সেই রাজ্যের প্রজাদের বাইরের অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হবে, যেখানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হবে।”
13 পরে যীশু সেই শত-সেনাপতিকে বললেন, “যাও! তুমি যেমন বিশ্বাস করেছ, তেমনই হবে।” আর সেই মুহূর্তেই তার দাস সুস্থ হয়ে গেল।
যীশু অনেক মানুষকে সুস্থ করলেন
14 যীশু যখন পিতরের বাড়িতে এলেন, তিনি দেখলেন, পিতরের শাশুড়ি জ্বরে বিছানায় শুয়ে আছেন। 15 তিনি তাঁর হাত স্পর্শ করলেন, এবং তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল। তিনি উঠে তাঁর পরিচর্যা করতে লাগলেন।
16 যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, বহু ভূতগ্রস্ত মানুষকে যীশুর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি মুখের কথাতেই ভূতদের তাড়িয়ে দিলেন ও সব অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করলেন। 17 এভাবে ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে কথিত বচন পূর্ণ হল:
“তিনি আমাদের সমস্ত দুর্বলতা গ্রহণ
ও আমাদের সকল রোগ বহন করলেন।”†যিশাইয় 53:4
যীশুকে অনুসরণের মূল্য
18 যীশু যখন তাঁর চারপাশে অনেক লোকের ভিড় দেখলেন, তিনি সাগরের অপর পারে যাওয়ার জন্য শিষ্যদের আদেশ দিলেন। 19 তখন একজন শাস্ত্রবিদ তাঁর কাছে এসে বললেন, “গুরুমহাশয়, আপনি যেখানে যাবেন আমিও আপনার সঙ্গে সেখানে যাব।”
20 উত্তরে যীশু বললেন, “শিয়ালদের গর্ত আছে, আকাশের পাখিদের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের‡অর্থাৎ মরিয়মের পুত্র ও সমস্ত মানবস্বভাববিশিষ্ট পূর্ণ মানুষ মাথা রাখার কোনও স্থান§অর্থাৎ, বিশ্রামস্থান। নেই।”
21 অন্য একজন শিষ্য তাঁকে বললেন, “প্রভু, প্রথমে আমাকে গিয়ে আমার পিতাকে সমাধি দিয়ে আসার অনুমতি দিন।”
22 কিন্তু যীশু তাঁকে বললেন, “আমাকে অনুসরণ করো। মৃতেরাই তাদের মৃতজনদের সমাধি দিক।”
যীশু ঝড় থামালেন
23 এরপর যীশু নৌকায় উঠলেন ও শিষ্যরাও তাঁর সঙ্গ নিলেন। 24 হঠাৎ সমুদ্রে এক ভয়ংকর ঝড় উঠল ও নৌকার উপরে ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। কিন্তু যীশু তখন ঘুমাচ্ছিলেন। 25 শিষ্যেরা গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে তুলে বললেন, “প্রভু, আমাদের রক্ষা করুন! আমরা যে ডুবতে বসেছি!”
26 তিনি উত্তর দিলেন, “অল্পবিশ্বাসীর দল, তোমরা এত ভয় পাচ্ছ কেন?” তারপর তিনি উঠে ঝড় ও ঢেউকে ধমক দিলেন, তাতে সবকিছু সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে গেল।
27 এতে শিষ্যেরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ইনি কেমন মানুষ? ঝড় ও সমুদ্র তাঁর আদেশ পালন করে!”
যীশু দুজন ভূতগ্রস্ত লোককে সুস্থ করলেন
28 পরে যীশু যখন সমুদ্রের অপর পারে গাদারীয়দের*কয়েকটি পাণ্ডুলিপিতে: গির্গাসেনীদের; অন্য কয়েকটিতে, গেরাসেনীদের। অঞ্চলে পৌঁছালেন, দুজন ভূতগ্রস্ত লোক সমাধিস্থল থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে এসে উপস্থিত হল। তারা এতই হিংস্র ছিল যে, সেই পথ দিয়ে কেউই যাওয়া-আসা করতে পারত না। 29 তারা চিৎকার করে বলল, “হে ঈশ্বরের পুত্র,†এর অর্থ, ঈশ্বর। অদৃশ্য, আত্মারূপী ঈশ্বরের রক্তমাংসে মূর্ত রূপ। মানবরূপে জন্মগ্রহণ করেও যাঁর মধ্যে ছিল ঐশ্বরিক সমস্ত গুণের সমাহার। আপনি আমাদের নিয়ে কী করতে চান? নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কি আপনি আমাদের যন্ত্রণা দিতে এসেছেন?”
30 তাদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে একপাল শূকর চরে বেড়াচ্ছিল। 31 সেই ভূতেরা যীশুর কাছে বিনতি করল, “আপনি যদি আমাদের তাড়াতে চান, তাহলে ওই শূকরদের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন।”
32 তিনি তাদের বললেন, “যাও!” তখন তারা বেরিয়ে এসে সেই শূকরপালের মধ্যে প্রবেশ করল। তাতে সেই শূকরের পাল ঢালু তীর বেয়ে তীব্র গতিতে ছুটে এসে সমুদ্রে পড়ল ও জলে ডুবে মারা গেল। 33 যারা সেই শূকরদের চরাচ্ছিল, তারা দৌড়ে পালিয়ে নগরের মধ্যে গেল ও এসব বিষয়ের সংবাদ দিল; ওই ভূতগ্রস্ত লোকদের কী ঘটেছিল, সেকথাও তারা বলল। 34 তখন নগরের সমস্ত লোক যীশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য বেরিয়ে এল। তারা তাঁকে দেখতে পেয়ে অনুরোধ করল, যেন তিনি তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যান।
*8:8 গ্রিক: ছাদের নিচে।
†8:17 যিশাইয় 53:4
‡8:20 অর্থাৎ মরিয়মের পুত্র ও সমস্ত মানবস্বভাববিশিষ্ট পূর্ণ মানুষ
§8:20 অর্থাৎ, বিশ্রামস্থান।
*8:28 কয়েকটি পাণ্ডুলিপিতে: গির্গাসেনীদের; অন্য কয়েকটিতে, গেরাসেনীদের।
†8:29 এর অর্থ, ঈশ্বর। অদৃশ্য, আত্মারূপী ঈশ্বরের রক্তমাংসে মূর্ত রূপ। মানবরূপে জন্মগ্রহণ করেও যাঁর মধ্যে ছিল ঐশ্বরিক সমস্ত গুণের সমাহার।