25
দশ কুমারীর রূপক
1 “সেই সময়ে স্বর্গরাজ্য হবে এমন দশজন কুমারীর মতো, যারা তাদের প্রদীপ হাতে নিয়ে বরের সঙ্গে মিলিত হতে গেল। 2 তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল নির্বোধ ও পাঁচজন ছিল বুদ্ধিমতী। 3 নির্বোধ কুমারীরা তাদের প্রদীপ নিল, কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো তেল নিল না। 4 কিন্তু বুদ্ধিমতী কুমারীরা প্রদীপের সঙ্গে পাত্রে করে তেলও নিল। 5 বর আসতে দেরি করল, ফলে তারা সকলে ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে পড়ল।
6 “মধ্যরাত্রে এক উচ্চ রব শোনা গেল: ‘দেখো, বর এসেছেন! তোমরা তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য বেরিয়ে এসো!’
7 “তখন সব কুমারী উঠে তাদের প্রদীপ সাজিয়ে নিল। 8 নির্বোধ কুমারীরা বুদ্ধিমতীদের বলল, ‘তোমাদের তেল থেকে আমাদের কিছু দাও; আমাদের প্রদীপগুলি নিভে যাচ্ছে।’
9 “তারা উত্তর দিল, ‘না, তোমাদের ও আমাদের জন্য হয়তো পর্যাপ্ত হবে না। বরং যারা তেল বিক্রি করে তাদের কাছে গিয়ে তোমরা নিজেদের জন্য কিছু তেল কিনে আনো।’
10 “তারা তেল কেনার জন্য যখন পথে যাচ্ছে, এমন সময় বর এসে পৌঁছালেন। যে কুমারীরা প্রস্তুত ছিল, তারা তাঁর সঙ্গে বিবাহ আসরে প্রবেশ করল। আর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল।
11 “পরে অন্য কুমারীরাও এসে পৌঁছাল। তারা বলল, ‘প্রভু! প্রভু! আমাদের জন্যও দরজা খুলে দিন!’
12 “কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।’
13 “সেই কারণে সজাগ থেকো, কারণ তোমরা সে দিন বা ক্ষণ জানো না।
তালন্তের রূপক
14 “আবার, এ হবে এমন এক ব্যক্তির মতো, যিনি বিদেশ ভ্রমণে বের হলেন। তিনি তার দাসদের ডেকে তাদের হাতে তার সম্পত্তির ভার দিলেন। 15 একজনকে তিনি পাঁচ তালন্ত*তালন্ত এক প্রাচীন মুদ্রা, যার মূল্য লক্ষ টাকারও বেশি। অর্থ দিলেন, অপর একজনকে দুই তালন্ত ও আরও একজনকে এক তালন্ত, যার যেমন ক্ষমতা, সেই অনুযায়ী দিলেন। তারপর তিনি ভ্রমণে চলে গেলেন। 16 যে মানুষটি পাঁচ তালন্ত নিয়েছিল, সে তক্ষুনি গিয়ে তার অর্থ বিনিয়োগ করল ও আরও পাঁচ তালন্ত লাভ করল। 17 একইভাবে, যে দুই তালন্ত নিয়েছিল, সে আরও দুই তালন্ত লাভ করল। 18 কিন্তু যে এক তালন্ত নিয়েছিল, সে ফিরে গেল, মাটিতে গর্ত খুঁড়ল ও তার মনিবের অর্থ লুকিয়ে রাখল।
19 “দীর্ঘ সময় পরে, ওই দাসদের মনিব ফিরে এলেন ও তাদের সঙ্গে হিসেব নিকেশ করতে চাইলেন। 20 যে পাঁচ তালন্ত নিয়েছিল, সে আরও পাঁচ তালন্ত নিয়ে এসে বলল, ‘প্রভু, আপনি আমার হাতে পাঁচ তালন্ত দিয়েছিলেন। দেখুন, আমি আরও পাঁচ তালন্ত লাভ করেছি।’
21 “তার মনিব উত্তর দিলেন, ‘বেশ করেছ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস! তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত থেকেছ; আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করব। এসো, তোমার মনিবের আনন্দের অংশীদার হও!’
22 “যে দুই তালন্ত নিয়েছিল, সেও এসে বলল, ‘প্রভু, আপনি আমাকে দুই তালন্ত দিয়েছিলেন; দেখুন, আমি আরও দুই তালন্ত লাভ করেছি।’
23 “তার মনিব উত্তর দিলেন, ‘বেশ করেছ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস! তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত থেকেছ; আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করব। এসো, তোমার মনিবের আনন্দের অংশীদার হও!’
24 “তখন যে এক তালন্ত অর্থ নিয়েছিল, সে এসে উপস্থিত হল। সে বলল, ‘প্রভু, আমি জানি, আপনি এক কঠোর প্রকৃতির মানুষ, যেখানে বীজ বোনেননি, সেখানে কাটেন এবং যেখানে বীজ ছড়াননি, সেখানেই সংগ্রহ করেন। 25 তাই আমি ভীত হয়ে, আপনার তালন্ত মাটিতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। এই দেখুন, আপনার যা, তা ফিরে পেলেন।’
26 “তার মনিব উত্তর দিলেন, ‘দুষ্ট ও অলস দাস! তুমি তো জানতে যে, আমি যেখানে বুনিনি, সেখানেই কাটি ও যেখানে বীজ ছড়াইনি, সেখানেই সংগ্রহ করি? 27 তাহলে মহাজনদের কাছে তুমি আমার অর্থ গচ্ছিত রাখতে পারতে, যেন আমি ফিরে এসে তা সুদসমেত ফেরত পেতাম।
28 “ ‘অতএব, তোমরা ওই তালন্তটি তার কাছ থেকে নিয়ে নাও এবং যার দশ তালন্ত আছে তাকে দিয়ে দাও। 29 কারণ যার কাছে আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে ও তার অনেক হবে। যার কাছে নেই, তার কাছে যা আছে, তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। 30 আর তোমরা সেই অকর্মণ্য দাসকে বাইরের অন্ধকারে ফেলে দাও, যেখানে কেবলই রোদন ও দন্তঘর্ষণ হবে।’
মেষপাল ও ছাগলেরা
31 “মনুষ্যপুত্র যখন তাঁর মহিমায়, তাঁর সমস্ত দূতদের সঙ্গে নিয়ে আসবেন, তিনি স্বর্গীয় মহিমায় তাঁর সিংহাসনে উপবেশন করবেন। 32 সমস্ত জাতিকে তাঁর সামনে উপস্থিত করা হবে। তিনি লোকেদের, একজন থেকে অপরজনকে পৃথক করবেন, যেভাবে মেষপালক ছাগদের মধ্য থেকে মেষদের পৃথক করে। 33 তিনি মেষদের তাঁর ডানদিকে ও ছাগদের তাঁর বাঁদিকে রাখবেন।
34 “তখন রাজা তাঁর ডানদিকের লোকদের বলবেন, ‘আমার পিতার আশিস ধন্য তোমরা এসো; জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তোমরা তার অধিকারী হও। 35 কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে খাবার দিয়েছিলে; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে পান করতে দিয়েছিলে; আমি অপরিচিত ছিলাম, তোমরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলে; 36 আমার পোশাকের প্রয়োজন ছিল, তোমরা পোশাক দিয়েছিলে; আমি অসুস্থ ছিলাম, তোমরা আমার দেখাশোনা করেছিলে; আমি কারাগারে ছিলাম, তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।’
37 “ধার্মিক ব্যক্তিরা তখন তাঁকে উত্তর দেবে, ‘প্রভু, আমরা কখন আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে আহার দিয়েছিলাম, বা তৃষ্ণার্ত দেখে পান করতে দিয়েছিলাম? 38 কখনই-বা আপনাকে অপরিচিত দেখে ভিতরে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দিয়েছিলাম, বা পোশাকহীন দেখে পোশাক দিয়েছিলাম? 39 কখনই-বা আপনাকে অসুস্থ বা কারাগারে দেখে আপনার কাছে গিয়েছিলাম?’
40 “রাজা উত্তর দেবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন তোমরা আমার এই ভাইবোনদের মধ্যে নগণ্যতম কারও প্রতি এরকম করেছিলে, তখন তা আমারই প্রতি করেছিলে।’
41 “তারপরে তিনি তাঁর বাঁদিকের লোকদের বলবেন, ‘অভিশপ্ত তোমরা, আমার কাছ থেকে দূর হয়ে অনন্ত অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হও, যা দিয়াবল ও তার দূতদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। 42 কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে কিছুই খেতে দাওনি; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে পান করার জন্য কিছু দাওনি; 43 আমি অপরিচিত ছিলাম, তোমরা আমাকে আশ্রয় দাওনি; আমার পোশাকের প্রয়োজন দেখেও আমাকে পোশাক দাওনি; আমি অসুস্থ ও কারাগারে ছিলাম, তোমরা আমার দেখাশোনা করোনি।’
44 “তারাও উত্তর দেবে, ‘প্রভু, আমরা কখন আপনাকে ক্ষুধার্ত বা তৃষ্ণার্ত, অপরিচিত বা পোশাকহীন, অসুস্থ বা কারাগারে দেখে সাহায্য করিনি?’
45 “তিনি উত্তর দেবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই নগণ্যতম জনেদের কোনো একজনের প্রতি যখন তা করোনি তখন তা তোমরা আমার প্রতিই করোনি।’
46 “তারপর তারা চিরন্তন শাস্তির উদ্দেশ্যে যাবে, কিন্তু ধার্মিকেরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করবে।”