24
যীশুর পুনরুত্থান ও স্বর্গে গমন।
1 সপ্তাহের প্রথম দিন তারা খুব ভোরে উঠে ঐ কবরের কাছে এলেন, যে সুগন্ধি দ্রব্য প্রস্তুত করেছিলেন তা নিয়ে আসলেন;
2 আর দেখলেন, কবর থেকে পাথরটা সরানো রয়েছে,
3 কিন্তু ভিতরে গিয়ে প্রভু যীশুর মৃতদেহ দেখতে পেলেন না।
4 তারা এই বিষয়ে ভাবছেন, এমন দিনের, দেখ, উজ্জ্বল পোষাক পরা দুজন পুরুষ তাদের কাছে দাঁড়ালেন।
5 তখন তারা ভয় পেয়ে মাটির দিকে মুখ নীচু করলে সেই দুই ব্যক্তি তাদের বললেন, মৃতদের মধ্যে জীবিতের খোঁজ করছ কেন?
6 তিনি এখানে নেই, কিন্তু উঠেছেন। গালীলে থাকতে তিনি তোমাদের যা বলেছিলেন, তা মনে কর;
7 তিনি তো বলেছিলেন, মনুষ্যপুত্রকে পাপী মানুষদের হাতে সমর্পিত হতে হবে, ক্রুশারোপিত হতে এবং তৃতীয় দিনের উঠতে হবে।
8 তখন তাঁর সেই কথা গুলি তাদের মনে পড়ল;
9 আর তারা কবর থেকে ফিরে গিয়ে সেই এগারো জন শিষ্যকে ও অন্য সবাইকে এই সব খবর দিলেন।
10 এরা মগ্দলীনী মরিয়ম, যোহানা ও যাকোবের মা মরিয়ম; আর এদের সঙ্গে অন্য স্ত্রীলোকরাও প্রেরিতদের এই সব কথা বললেন।
11 কিন্তু এই সব কথা তাদের দৃষ্টিতে গল্পের মত মনে হল; তারা তাদের কথায় বিশ্বাস করলেন না।
12 তা সত্বেও পিতর উঠে গিয়ে কবরের কাছে দৌড়ে গেলেন এবং নীচু হয়ে ভালো করে দেখলেন, শুধু কাপড় পরে রয়েছে; আর যা ঘটেছে, তাতে অবাক হয়ে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন।
ইম্মায়ুর পথে।
13 আর দেখ, সেই দিন তাদের দুজন যিরুশালেম থেকে সাত মাইল দূরে ইম্মায়ূ নামে গ্রামে যাচ্ছিলেন,
14 এবং তারা ঐ সব ঘটনার বিষয়ে একে অপরে কথাবার্তা বলছিলেন।
15 তারা কথাবার্তা ও একে অপরে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, এমন দিনের যীশু নিজে এসে তাদের সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলেন;
16 কিন্তু তাদের চোখ বন্ধ হয়েছিল, তাই তাঁকে চিনতে পারলেন না।
17 তিনি তাদের বললেন, তোমরা চলতে চলতে একে অপরে যে সব কথা বলাবলি করছ, সে সব কি? তারা বিষন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
18 পরে ক্লিয়পা নামে তাদের একজন উত্তর করে তাঁকে বললেন, আপনি কি একা যিরুশালেমে বাস করছেন, আর এই কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা জানেন না?
19 তিনি তাদেরকে বললেন, কি কি ঘটনা? তারা তাঁকে বললেন, নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে ঘটনা, যিনি ঈশ্বরের ও সব লোকের সামনে ও কাজে ও কথায় মহান ভাববাদী ছিলেন;
20 আর কীভাবে প্রধান যাজকেরা ও আমাদের শাসকেরা প্রাণদণ্ডের জন্য দোষী করে তাকে সমর্পণ করলেন, ও ক্রুশে দিলেন।
21 কিন্তু আমরা আশা করছিলাম যে, তিনি সেই ব্যক্তি, যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন। আর এসব ছাড়া আজ তিনদিন হচ্ছে, এসব ঘটেছে।
22 আবার আমাদের কয়েক জন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করলেন; তারা ভোরে তাঁর কবরের কাছে গিয়েছিলেন,
23 আর তাঁর মৃতদেহ দেখতে না পেয়ে এসে বললেন, স্বর্গ দূতদের ও দেখা পেয়েছি এবং তাঁরা বলেন, তিনি জীবিত আছেন।
24 আর আমাদের সঙ্গীদের যারা কবরের কাছে গিয়েছিল, তারাও সেই স্ত্রীলোকেরা যেমন বলেছিলেন, তেমনি দেখতে পেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে দেখতে পাননি।
25 তখন তিনি তাদের বললেন, হে অবুঝরা এবং ধীর হৃদয়ের লোকেরা, ভাববাদীরা যে সব কথা বলেছেন, সেই সবে বিশ্বাস করতে পার না
26 খ্রীষ্টের কি প্রয়োজন ছিল না যে, এই সব দুঃখভোগ করেন ও নিজের মহিমায় প্রবেশ করেন?
27 পরে তিনি মোশি থেকে ও সমস্ত ভাববাদী থেকে শুরু করে সব শাস্ত্রে তাঁর নিজের বিষয়ে যে সব কথা আছে, তা তাদের বুঝিয়ে দিলেন।
28 পরে তারা যেখানে যাচ্ছিলেন, সেখানে সেই গ্রামের কাছে আসলেন; আর তিনি দূরে যাবার ভাব দেখালেন।
29 কিন্তু তারা অনুরোধ করে বললেন, আমাদের সঙ্গে থাকুন, কারণ সন্ধ্যা হয়ে আসল, বেলা প্রায় চলে গেছে। তাতে তিনি তাদের সঙ্গে থাকার জন্য গৃহে ঢুকলেন।
30 পরে যখন তিনি তাদের সঙ্গে খাবার খেতে বসলেন, তখন রুটি নিয়ে ধন্যবাদ করলেন এবং ভেঙে তাদের দিতে লাগলেন।
31 অমনি তাদের চোখ খুলে গেল, তারা তাঁকে চিনতে পারলেন, আর তিনি তাদের থেকে অদৃশ্য হলেন।
32 তখন তারা পরস্পরকে বললেন, পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের ভিতরে আমাদের হৃদয় কি উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছিল না?
33 আর তারা সেই দিনের ই উঠে যিরুশালেমে ফিরে গেলেন; এবং সেই এগারো জনকে ও তাদের সঙ্গীদের একসঙ্গে দেখতে পেলেন;
34 তারা বললেন, প্রভু নিশ্চয় উঠেছেন এবং শিমোনকে দেখা দিয়েছেন।
35 পরে সেই দুজন পথের ঘটনার বিষয়ে এবং রুটি ভাঙার দিন তারা কীভাবে তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন, এই সব বিষয়েও বললেন।
শিষ্যদের সামনে যীশুর আবির্ভাব।
36 তারা একে অপর এই কথাবার্তা বলছেন, ইতিমধ্যে তিনি নিজে তাদের মাঝে দাঁড়ালেন, ও তাদের বললেন, তোমাদের শান্তি হোক।
37 এতে তারা খুব ভয় পেয়ে মনে করলেন, ভূত দেখছি।
38 তিনি তাদের বললেন, কেন উদ্বিগ্ন হচ্ছ? তোমাদের মনে সন্দেহ জাগছে কেন?
39 আমার হাত ও আমার পা দেখ, এ আমি নিজে; আমাকে স্পর্শ কর, আর দেখ; কারণ আমায় যেমন দেখছ, ভূতের এই রকম হাড় মাংস নেই।
40 এই বলে তিনি তাদের হাত ও পা দেখালেন।
41 তখনও তারা এত আনন্দিত হয়েছিল যে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ও অবাক হচ্ছিল, তাই তিনি তাদের বললেন, তোমাদের কাছে এখানে কি কিছু খাবার আছে?
42 তখন তারা তাঁকে একটি ভাজা মাছ দিলেন।
43 তিনি তা নিয়ে তাদের সামনে খেলেন।
44 পরে তিনি তাদের বললেন, তোমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে আমি তোমাদের যা বলেছিলাম, আমার সেই কথা এই, মোশির ব্যবস্থায় এবং ভাববাদীদের পুস্তকে এবং গীতসংহিতায় আমার বিষয়ে যা যা লেখা আছে, সে সব অবশ্য পূর্ণ হবে।
45 তখন তিনি তাদের মন খুলে দিলেন, যেন তারা শাস্ত্র বুঝতে পারে,
46 আর তিনি তাদের বললেন, এই কথা লেখা আছে যে, খ্রীষ্ট দুঃখভোগ করবেন এবং তৃতীয় দিনের মৃতদের মধ্যে থেকে উঠবেন;
47 আর তাঁর নামে পাপ ক্ষমার জন্য মন ফেরানোর কথা সব জাতির কাছে প্রচারিত হবে যিরুশালেম থেকে শুরু করা হবে।
48 তোমরাই এসবের সাক্ষী।
49 আর দেখ আমার পিতা যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা আমি তোমাদের কাছে পাঠাচ্ছি; কিন্তু যে পর্যন্ত স্বর্গ থেকে আসা শক্তি না পাও, সেই পর্যন্ত তোমরা ঐ শহরে থাক।
যীশুর স্বর্গারোহন।
50 পরে তিনি তাদের বৈথনিয়া পর্যন্ত নিয়ে গেলেন; এবং হাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করলেন।
51 পরে এই রকম হল, তিনি আশীর্বাদ করতে করতে তাদের থেকে আলাদা হলেন এবং স্বর্গে যেতে লাগলেন।
52 আর তারা তাঁকে প্রণাম করে মহানন্দে যিরুশালেমে ফিরে গেলেন;
53 এবং সর্বক্ষণ ধর্মগৃহে থেকে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করতে লাগলেন।